img

আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, শীতকালে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসবে। অনেকে একে দ্বিতীয় ঢেউ বলছে। আবার কেউ বলছে, দেশে প্রথম ঢেউ এখনো শেষ হয়নি, সেটারই আরেকটি চূড়া আসছে। একে ‘শীতকালীন ঢেউ’ নাম দেওয়া যেতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকায় এমন ঢেউ ইতিমধ্যে দেখা গেছে।

শীতের শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। বায়ুদূষণের কারণে এমনিতেই জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন বায়ুদূষণের কারণে অসুস্থও হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে করোনার সঙ্গে এই ইনফেকশন (সংক্রমণ) আলাদা করতেও সমস্যা হবে।

করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যেকোনো সময় তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এখন সর্বাত্মক প্রস্তুতির দরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সরাসরি নির্দেশনা আসছে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ কমিটির অধীনে বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট’বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। এ গ্রুপ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ১৩ দফা সুপারিশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে আটটি সুপারিশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসব সুপারিশ কারা বাস্তবায়ন করবে, সেটিও বলে দেওয়া হয়েছে।

দেশে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি ও মোকাবিলা পরিকল্পনা নিয়ে গত আগস্টের পর আর পর্যালোচনা হয়নি। প্রথম সুপারিশ হিসেবে এটি পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের লোকবলকেও যুক্ত করতে বলা হয়েছে। দেশের পয়েন্ট অব এন্ট্রিগুলোতে (স্থল, বিমান ও নৌবন্দর) কড়াকড়িভাবে স্ক্রিনিং করতে হবে, তা না হলে দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। করোনা মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কাজ শুরু করতে হবে। শহর এলাকায় স্বাস্থ্য অবকাঠামো নেই বললেই চলে। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ নয়, সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ কাজে যুক্ত হতে হবে।

একই সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও ব্যাপক আকারে হতে হবে। যাঁরা মাস্ক ক্রয় করতে পারবেন না, তাঁদের জন্য এফবিসিসিআই, বিজিএমইএর মতো ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো বিনা মূল্যে মাস্ক তৈরি করে জেলা প্রশাসকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে। জেলার মাসিক সভায় এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। জেলা প্রশাসকদের এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হবে।

সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থাকবে। এ নিয়ন্ত্রণকক্ষ কাজগুলো কীভাবে হচ্ছে, কতটুকু হচ্ছে, কোথায় সমন্বয়ের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো দেখভাল করবে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। নিজ নিজ মন্ত্রণালয় তাদের কাজগুলো করলে আগের চেয়ে এবার করোনা নিয়ন্ত্রণ ভালো হতে পারে।

সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে লেগে থাকতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা থাকে, কিন্তু ইচ্ছাটা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হতে গিয়ে এর কার্যকারিতা কমে যায়। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে দাতা সংস্থা ও এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা যায়নি। এবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সম্পৃক্ত হতে হবে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর