img

দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকের উপস্থিতি কম। আবার নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের বড় অংশই ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা (এমএফআই) বা স্থানীয় উৎস থেকে ঋণ নিয়ে চলে। তাই করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া এই শ্রেণিকে লক্ষ্য রেখে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর (এমএফআই) মাধ্যমে কম সুদে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এই ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সব ব্যাংক আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে ৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই তহবিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়, আর ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেয় এমএফআইগুলোকে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এমএফআইগুলো ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। আগে এমএফআইগুলোর বিতরণ করা ঋণের সুদহার ছিল সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ। এই প্যাকেজ থেকে একটি এমএফআই তিনটি ব্যাংক থেকে দেড় শ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে।

জানা গেছে, এই প্যাকেজ থেকে ঋণ পেতে ব্যাংকগুলো নিজেরাই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অনেক ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। গত অক্টোবর পর্যন্ত ওই প্যাকেজের আওতায় ৮৫টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। ঋণ বিতরণ হয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা। ঋণ পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ২৯৯ জন গ্রাহক।

সবচেয়ে বেশি ঋণ অনুমোদন করেছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটি ৮টি এমএফআইয়ের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে, বিতরণ করা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৯টি এমএফআইকে ২২২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে, বিতরণ করা হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। দি সিটি ব্যাংক ৯টি এমএফআইয়ের জন্য ১৮০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে, বিতরণ করা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা ও ব্যাংক এশিয়া ৭৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে।

তবে কোনো ঋণ অনুমোদন করেনি রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ঢাকা, ইস্টার্ণ, এক্সিম, মিডল্যান্ড, মধুমতি, প্রাইম, সাউথ বাংলা, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড ও ইউনিয়ন ব্যাংক কোনো ঋণ অনুমোদন করেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও পর্যালোচনা নিয়ে সভা ডাকলেও তাতে সাড়া দেয়নি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটিকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছে, ‘স্কিমের আওতায় ২৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ অনুমোদন বা বিতরণ করেনি। ফলে সরকারের প্রাধিকারভুক্ত স্কিম বাস্তবায়নে আপনাদের গাফিলতি রয়েছে, মর্মে প্রতীয়মান হয়। এই স্কিমের অগ্রগতি পর্যালোচনায় গত ৬ অক্টোবর আয়োজিত সভা ও প্রশিক্ষণ পর্যালোচনায় আপনাদের ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হলে জানানো হয়, সভায় ব্যাংকের ফোকাল কর্মকর্তা অনলাইনে অংশ নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ওই সভায় অনলাইনে যোগদানের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।’

ব্যাংকটির এমডিকে আরও বলা হয়েছে, ‘স্কিম বাস্তবায়নে গাফিলতি প্রদর্শন এবং এ বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব প্রদান না করায় আপনাকে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।’

জানতে চাইলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘কেন এমনটি হলো, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা বুঝেশুনে এই প্যাকেজের ঋণ বিতরণ করছি। এর মধ্যে কিছু ঋণ দেওয়া হয়েছে।’

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর