img

ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের দিন (বৃহস্পতিবার) পূর্বনিধারিত কর্মসূচি ছাড়াই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলের পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

হঠাৎ করে রাজধানীতে বিএনপির এমন জ্বালাও-পোড়াও্র কর্মসূচি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‌‘কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন, কী স্বার্থে? কীসের জন্য? নির্বাচন হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নামে অংশগ্রহণ করে। টাকা-পয়সা যা পায় পকেটে নিয়ে রেখে দেয়। ইলেকশনের দিন ইলেকশনও করে না। এজেন্টও দেয় না। কিছুই করে না। মাঝ পথে ইলেকশন বয়কটের নামে বাসে আগুন দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এর উদ্দেশ্যটা কী?’

তবে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, ওই দিন মিছিল করার কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে করেছে তা তারাই বলতে পারবে।

নির্বাচনের দিন পূর্বনির্ধারিত কোনো কর্মসূচি ছিল কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কে বা কারা মিছিল করেছে তা-ও জানি না। তবে মিছিলের পর সরকারের এজেন্টরা যা করেছে তা জনগণ বিশ্বাস করেনি। গাড়ি পোড়ানো মামলায় এমন একজনকে বাদী করেছে যে তিনি মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি কোনো অভিযোগও দেননি কিংবা মামলা করেননি।’

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীনের নেতৃত্বে যুবদলের কিছু নেতা ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেন। এর আগে ও পরে কার্যালয়েই ছিলেন শাহীনসহ অন্যরা।

শনিবার রাতে এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় স্থায়ী কমিটির এক সদস্য তাঁর দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের দিন কোনো প্রতিবাদ করি না। পরবর্তী সময়ে যে কর্মসূচি দেওয়া হয় তা পালন করি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের দিন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করেন। আর এই সুযোগটাই সরকার গ্রহণ করে। আজকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযোগ করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি পুড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মামলায় বিএনপি নেতাদের অভিযুক্ত করায় এখন তাঁরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়ও বিঘ্ন সৃষ্টি  হতে পারে।’

স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমাদের পূর্বনির্ধারিত কোনো প্রতিবাদ কমর্সূচি ছিল না। তাই আমি ওই দিন সকালে সরাসরি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করি। সেখানে অবস্থান করে দুই উপনির্বাচনের খবরাখবর নিচ্ছিলাম। পরে সংবাদ সম্মেলন করি। আমরা কার্যালয়ের বাইরে বের হইনি। তবে কে বা কারা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তা বলতে পারব না। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে সরকারের এজেন্টরা আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও জনগণ তা গ্রহণ করেনি।'

মামলার বিষয়ে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে আমি অসুস্থ থাকায় বাসায় আইসোলেশনে আছি। যার কারণে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের শেষের দিনগুলোতে প্রচারণায় যেতে পারিনি। বাসা থেকে একেবারেই বের হইনি। অথচ আইসোলেশনে থেকেও মামলার প্রধান আসামি হয়েছি আমি। বিএনপি গণতন্ত্রের রাজনীতি করে। আমরা আন্দোলন করি রাজপথে। আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। যখন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীরূপে মাঠে নামা শুরু করছে, ঠিক তখনই সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মতো ঘটনা ঘটিয়ে দমন-পীড়নের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে যাচ্ছে।'

এই বিভাগের আরও খবর