img

বহির্নোঙরে জাহাজ আসার পরও চার-পাঁচ দিনে পণ্য হাতের নাগালে না পাওয়াই ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক ঘটনা। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বহির্নোঙরে থাকত কনটেইনার জাহাজের জট। এই চিত্র কিন্তু বদলে গেছে। এখন জেটি যেমন খালি থাকছে, তেমনি জাহাজও আসামাত্রই ভিড়ে যাচ্ছে পণ্য খালাসের জন্য। ফলে গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে কম সময়ে পণ্য হাতে পাচ্ছেন আমদানিকারকেরা। এতে কারখানায় দ্রুত কাঁচামাল চলে যাচ্ছে এবং পণ্যও বাজারজাত হচ্ছে।

মূলত দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের অবকাঠামো জোরদার না হওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজের জট ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। এখন অবশ্য ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি বা কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় সেবা দিতে পারছে বন্দর। তাতে চার মাসে ধরে বন্দরের সেবার মান ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

বন্দরসুবিধা বাড়লে দেশের উৎপাদনমুখী সব শিল্পকারখানা সুফল পায়। কারণ, সিমেন্ট ও ইস্পাত ছাড়া কমবেশি সব ধরনের শিল্প কারখানার কাঁচামাল আমদানি হয় কনটেইনারে। রপ্তানি পণ্যেরও পুরোটাই যায় কার্যত কনটেইনারে। আর কনটেইনার পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে শীর্ষে হলো পোশাকশিল্প খাত। ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর দ্রুত পোশাক রপ্তানি করা যাবে কি না, তা অনেকাংশে নির্ভর করে বন্দরের সুযোগ-সুবিধার ওপর।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ ছালাম বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমদানি-রপ্তানি কমায় জট নেই। বন্দরের সুবিধাও বেড়েছে। এতে আত্মতৃপ্তিতে থাকলে চলবে না। বন্দরের উচিত হবে, এই সুসময় কাজে লাগিয়ে জেটি বাড়ানো ও ইয়ার্ড নির্মাণের মতো পরিকল্পনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যাতে ব্যবসা বাড়লে বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্যের চাপ সামাল দিতে পারে। কারণ, ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দেওয়ার আগে বন্দরসুবিধাও দেখে নেন।

সেবার মানে উন্নতি

জাহাজ আসার পর কত দ্রুত জেটিতে ভিড়তে পারছে, সেটি হলো চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মানের সবচেয়ে বড় সূচক। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) নির্দেশিকা অনুযায়ী, বন্দরের জলসীমায় জাহাজ আসার পর থেকে জেটিতে ভেড়ানো পর্যন্ত সময়কে ‘অপেক্ষমাণ সময়’ হিসেবে ধরা হয়।

অপেক্ষমাণ সময় পেরিয়ে জেটিতে ভেড়ানোর পরই জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়। এরপর শুল্ক-করসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস নিতে পারেন। পোশাকশিল্পের কাঁচামালের মতো জরুরি পণ্য জাহাজ থেকে নামানোর পর সিংহ ভাগই কয়েক দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে খালাস করে নেওয়া হয়।

বন্দরের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে বন্দরের জলসীমায় আসার পর থেকে জেটিতে ভেড়ানো পর্যন্ত প্রতিটি জাহাজের সময় লেগেছে ১৮ ঘণ্টা। বন্দরে জোয়ারের সময় জাহাজ ভেড়ানো হয়। তাতে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা স্বাভাবিক সময় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। অথচ গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রতিটি জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় ছিল পাঁচ দিন ছয় ঘণ্টা।

গতকাল বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায় বহির্নোঙরে অপেক্ষায় ছিল একটি জাহাজ। গত বছর এ দিনে অপেক্ষমাণ ছিল ১৬টি জাহাজ, আর ২০১৮ সালে ছিল ১৩টি। তখন সক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য ওঠানো-নামানো চাপ থাকায় জটও বেশি ছিল।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুধু পণ্য আমদানির চাপ কমেছে বলে নয়, বন্দরের দক্ষতাও বেড়েছে। মহামারির পুরো সময়ে সেবার মানের উন্নতি ধরে রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর সামনে আমদানির চাপ বাড়লেও সমস্যা হবে না। কারণ, আগামী বছর জুনে বন্দরের বহরে যুক্ত হবে পতেঙ্গা টার্মিনাল। আশা করি, ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এখনকার মতোই সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।’

কনটেইনার পণ্য কম

বন্দরের হিসাব অনুযায়ী এ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বন্দর দিয়ে ১৯ লাখ ১৮ হাজার একক কনটেইনার পরিবহন হয়। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। অর্থাৎ এক বছরে কনটেইনার পরিবহন কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।

পণ্যভিত্তিক আমদানি বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কনটেইনারে তুলা, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল, প্রাণিখাদ্যে ব্যবহৃত সয়াকেক, ছোলা, সিরামিক পণ্য ইত্যাদির আমদানি কমেছে।

গত বছর বন্দর দিয়ে যত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে, তার ২৮ শতাংশই কনটেইনারে আনা-নেওয়া হয়। বাকি পণ্য বাল্ক জাহাজে (বড় জাহাজের খোলে) ও ট্যাংকারে আমদানি হয়েছে। দেশের সমুদ্রপথে যত কনটেইনার পরিবহন হয়, তার ৯৮ শতাংশই পরিবহন হয় এই বন্দর দিয়ে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর