img

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার পর আবারও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে নানামুখী হিসাব-নিকাশ করছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো। তাতে পোশাকের ক্রয়াদেশ আসার হার কিছুটা শ্লথ হওয়া শুরু হয়েছে। অবশ্য বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব এখনো পড়েনি।

পোশাকশিল্পের মালিকেরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে গত মার্চের মতো পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হলে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো নতুন করে সংকটে পড়বে।

সার্বক্ষণিক করোনার তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যানুসারে, বিশ্বজুড়ে গত শুক্র ও শনিবার করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি। আর রোববার নতুন করে ৩ লাখ ২৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপে ১ লাখ ৩৫ হাজার ও যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে ক্রেতারা যেসব নতুন ক্রয়াদেশের জন্য ইনকোয়ারি করছিল সেগুলো নিয়ে তারা বর্তমানে চুপচাপ আছে। মানে হচ্ছে, তারা করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’ দুটি বড় ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর প্রচুর ক্রয়াদেশ দিলেও তারা এখন নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।

করোনার প্রথম ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি পোশাক খাত। গত এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলার। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটিতে দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনা ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, তখন প্রায় ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়। পরে নানামুখী চাপের কারণে অধিকাংশ ক্রেতাই পণ্য নিতে সম্মত হয়। তবে অর্থ পরিশোধে কয়েক মাস সময় চেয়েছে অনেক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড। অনেক ক্ষেত্রে মূল্য ছাড়ও দিতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। তবে বাতিল ও স্থগিত হওয়া অধিকাংশ পণ্যই ইতিমধ্যে রপ্তানি হয়ে গেছে।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে চলমান শীত মৌসুমের পোশাক গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসার সময়, যা আগামী ডিসেম্বর থেকে রপ্তানি শুরু হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জের প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘স্বাভাবিকের চেয়ে কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছে ক্রেতারা। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভীত হওয়ার মতো বার্তা এখনো পাইনি। তবে সংক্রমণ খারাপের দিকে গেল পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’

করোনার প্রথম ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি পোশাক খাত। গত এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলার। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটিতে দাঁড়ায়।

তারপরও গত ২০১৯–২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম। চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৮১১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তাতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি মাত্র দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক গতকাল বলেন, ‘ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি আমরা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের মুখোমুখি যেন না হতে হয়, বর্তমানে সেই প্রত্যাশাই করছি। কারণ, নতুন করে ধাক্কা নেওয়ার সামর্থ্য পোশাকশিল্পের নেই।’

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর