সুদের হার ৩ শতাংশের নিচে
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে একে অন্যের থেকে এক দিনের জন্য টাকা ধার নেয়। যাকে কলমানি বাজার বলা হয়। যখন ব্যাংক টাকার সংকটে পড়ে, তখন এর সুদহারও বেড়ে যায়। আর এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নেমেছে যে মাঝেমধ্যে ১০ পয়সা সুদেও কলমানিতে টাকা ধার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুদহার কিছুটা বেশি।
কলমানিতে সাধারণত বেশি টাকা ধার দেয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। আর ধার বেশি করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এখন ধার দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে বসে আছে অনেক ব্যাংক, কিন্তু ধার নেওয়ার ব্যাংক কম। এ কারণে সুদহার নেমেছে তলানিতে।
ফলে সব মিলিয়ে কলমানিতে গড় সুদহার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আগে এত সস্তায় কবে টাকা মিলত, তা স্মরণ করতে পারছেন না এখনকার ব্যাংক কর্মকর্তারা। সুদ কমার পাশাপাশি কলমানি বাজারে লেনদেনও বেশ কমে গেছে।
কলমানিতে সাধারণত বেশি টাকা ধার দেয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। আর ধার বেশি করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এখন ধার দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে বসে আছে অনেক ব্যাংক, কিন্তু ধার নেওয়ার ব্যাংক কম। এ কারণে সুদহার নেমেছে তলানিতে।
কলমানিতে সুদ এত কম কবে ছিল, তা মনে করতে পারেননি অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামও। তিনি বলেন, এখন ১ শতাংশ সুদেও টাকা ধার দেওয়া হচ্ছে। সামনের দিনে অনেক বিল পরিশোধ ও ঋণের চাহিদা আসবে। তখন টাকায় টান পড়বে। ফলে এখন সবাইকে বুঝেশুনেই ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে কলমানি থেকে টাকা ধার নেওয়া হয়। বড় কোনো উত্তোলন, ঋণ বিতরণ হলে ব্যাংকগুলো টাকা ধার করে। আবার আমদানি দায় পরিশোধের প্রয়োজন হলে ডলার কিনতেও অনেকে টাকা ধার নেয়। তবে এখন বেশির ভাগ ব্যাংকের কাছে টাকা থাকায় এর প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। এতে কমেছে সুদহারও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার কলমানি বাজারে ২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে। এর গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে অর্থ লেনদেন করে।
গত বছরের ২০ অক্টোবর কলমানিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে টাকা হাতবদল হয়েছিল। গড় লেনদেন হার ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর হাতবদল হয় ৭ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোতে ঈদের আগে টাকার প্রয়োজনে কলমানি সুদহার ২০ শতাংশের বেশি উঠে যাওয়ারও নজির আছে। তবে এখন টাকার এত চাহিদা নেই।
কলমানিতে টাকা ধার নিলে পরদিনই তা ফেরত দিতে হয়। এই ধারের মেয়াদ বাড়ানো যায় না। তবে নতুন করে আবার ধার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কলমানিতে টাকা ধার নিয়ে ব্যাংকগুলো ততটা সতর্ক না।
ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত টাকা জমে গেছে। এ জন্য ১ শতাংশের কম সুদেও টাকা ধার দিতে হচ্ছে। এটা যেহেতু প্রধান ব্যবসা নয়, তাই এর সঙ্গে মুনাফা বা লোকসানের সম্পর্ক নেই। কলমানির মাধ্যমে টাকা বসিয়ে না রেখে খাটানো হচ্ছে। ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে টাকা ধার নিচ্ছে। নিশ্চয়ই কেউ এক দিনের জন্য টাকা ধার করে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে না।
এদিকে গত আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ আছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘কলমানি সুদহার একেবারে নিচে নেমে এসেছে। সব আমানতের সুদও কমছে। এতে সমস্যায় পড়ছে অবসরভোগী কর্মকর্তারা। আমরা এখন দেড় শতাংশ সুদেও টাকা ধার দিচ্ছি।’
জিরোআওয়ার২৪/এমএ