img

মুখগহ্বরের নানা রোগের মধ্যে আলসার বা ক্ষত অন্যতম। প্রায়ই জিহ্বা, ঠোঁট, মাড়ি, চোয়ালের ভেতরের অংশ বা তালুতে নানা ধরনের ঘাঁ বা ক্ষত অনেককে কষ্ট দেয়। মুখের নানাবিধ আলসারের সঠিক কারণ জানা না গেলেও কয়েকটি বিষয় এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে ধূমপান, জর্দা, গুল ও মদ্যপান অন্যতম। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে:

● জিহ্বা বা গালের ভেতরে কামড় বা ব্রাশের আঘাত।

● ভাঙা দাঁত বা কৃত্রিম দাঁতের অমসৃণ অংশের ঘর্ষণে কেটে যাওয়া।

● মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা।

● গর্ভাবস্থায়, বয়ঃসন্ধিকালে এবং মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন।

● কিছু ওষুধ যেমন বেটা ব্লকার, এনালজেসিক ইত্যাদির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

● বংশগত কারণ।

● এলার্জির কারণ।

● রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডসের মতো রোগে।

● অপুষ্টি, ভিটামিন বি–১২ অথবা আয়রনের ঘাটতি।

● অনিদ্রা, বদ হজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য।

● অতিরিক্ত মসলা, চিনি, ফার্স্ট ফুড, গরম খাবার খাওয়া।

● ভাইরাস ও ছত্রাকের সংক্রমণ।

● মুখের যত্নে অবহেলা।

মুখের নানাবিধ আলসার

অ্যাপথাস আলসার: খুব পরিচিত ও যন্ত্রণাদায়ক এমন ক্ষত মুখের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে জিহ্বার পাশে ও ঠোঁটের বা গালের ভেতরের অংশে এটা বেশি হয়। বৃত্তাকার ছোট হলুদাভাব সাদা বর্ণের ক্ষতটি গাঢ় লাল বর্ণের সীমানা দিয়ে আবদ্ধ থাকে। এ সমস্যায় খেতে, দাঁত ব্রাশ করতে, এমনকি কথা বলতেও কষ্ট হয়। এই আলসার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

ছত্রাকের সংক্রমণ: যেকোনো বয়সেই, বিশেষ করে শিশুদের মুখের মধ্যে জিহ্বা বা অন্য কোথাও সাদা প্রলেপের মতো অনেকটা ব্যথাহীন ক্ষত দেখা যায়। এমন ক্ষতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একটু ঘষা দিলে সাদা প্রলেপটি উঠে লাল বর্ণের ক্ষত দেখা যায়। মুখের যত্নে অবহেলা থেকে এ সমস্যা হয়। সঠিক যত্নে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ছত্রাকরোধক ওষুধে এমন ক্ষত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ভাইরাসের সংক্রমণ: ঠোঁটের কোণে, মাড়িতে, চোয়ালে বা তালুতে প্রথমে লাল হয়ে ফুলে যায়, পরে ফোস্কার মতো দেখা যায়। এরপর সেই ফোস্কা গলে ক্ষতের সৃষ্টি করে। হারপিস প্রজাতির একধরনের ভাইরাসের এমন সংক্রমণে এমনটা হয়। এর সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত জ্বর, ব্যথাসহ দুর্বলতা থাকতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার, গরম খাবার পরিহার, লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি, ওয়েন্টমেন্ট কষ্টের মাত্রা কমাতে পারে।

প্রিক্যানসার ক্ষত: বেশ কিছু আলসার যেমন লিউকোপ্লাকিয়া, সাব মিউকাস ফাইব্রোসিস, ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া, লাইকেনপ্লানাস নামের ক্ষতগুলো মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোয়ালের ভেতরে সাদা জালের মতো বা কালো ধূসর বা লাল বর্ণের ক্ষতগুলো অনেকটা উপসর্গহীন থাকে। সাধারণত যত্ন বা চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবস্থা নিলে এই ক্ষত ক্যানসারের রূপ নেয় না।

হরমোনে তারতম্য: বয়সের বিভিন্ন পর্যায়ে হরমোনে পরিবর্তন, বিশেষ করে মেয়েদের পিরিয়ডের সময়, মেনোপজ ইত্যাদির সময় মুখে ক্ষত দেখা যেতে পারে।

ক্যানসার: মুখের ক্যানসারের জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হয়। মূলত অবহেলিত মুখের ঘা থেকেই ক্যানসারের জন্ম হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির মাধ্যমে আমাদের দেশেই শতভাগ সফল চিকিৎসা হয়।

মনে রাখতে হবে, মুখের যেকোনো ক্ষত বা অ্যালসার ১৪ দিনের বেশি রয়ে গেলে অবশ্যই অনুমোদিত দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর