img

বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখন যে নিম্ন হারের মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন সুদহারের জমানা চলছে, তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। ব্যাংকাররা এখন আর এই আশা করেন না যে সুদহার বাড়ানো হলে তাঁদের মুনাফাও বাড়বে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ বলছেন, সেই যুগের অবসান ঘটতে চলেছে; অর্থাৎ পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে—উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির হার বার্ষিক হিসাবে ৫ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে চলে যাবে।

আগামী ২০-৩০ বছরে চীন ও পশ্চিমা পৃথিবীতে জাপানের মতো বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এতে স্বাভাবিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়বে, অর্থাৎ যত মানুষ কাজ করবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ কর্মক্ষম মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এখন তো কোভিড-১৯-এর প্রকোপ চলছে, তবে তার আগে থেকেই পশ্চিমা দুনিয়া এই ক্রমবর্ধমান বুড়ো মানুষদের চিকিৎসার খরচ, পেনশন ও ভরণপোষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফলাফল—এই মহামারি সামলাতে এবং বুড়ো মানুষদের ভরণপোষণ দিতে দেশে দেশে ঋণের বোঝা বাড়বে। এর সঙ্গে বিশ্বায়নবিরোধিতার পালে আরও হাওয়া লাগবে, সরবরাহব্যবস্থার সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ কারখানা নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। তখন কম শ্রমিক বেশি কাজ করবে, বুড়ো মানুষদের দেখাশোনার মানুষও কমে যাবে। কারখানা দেশে ফিরে এলে স্বাভাবিকভাবে শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে, সেই সঙ্গে কমবে অসমতা এবং বাড়বে মূল্যস্ফীতি।

আর এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে সুদহার বৃদ্ধি করবে। কিন্তু লেখকেরা বলছেন, সরকার ও বেসরকারি খাতের ওপর যে পরিমাণ ঋণের বোঝা তৈরি হবে, তাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপারটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়াবে বার্ষিক ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কোভিড-উত্তর পুনরুদ্ধারকালে আমরা সেটা দেখতে পাব।

তেমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক কী করবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। নির্ভর করবে ধারাবাহিক নিম্ন সুদের জমানায় তারা সুদহারের ব্যবধান ঠিক কতটা বাড়াতে পারবে এবং সুদহার বাড়লে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দেউলিয়া হওয়ার প্রবণতা কতটা বাড়ে, তার ওপর। মূল্যস্ফীতির হার মাঝারি পর্যায়ে থাকলে করপোরেটগুলো এখনকার চেয়ে ভালো করবে। কিন্তু সমস্যা হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

গুডহার্ট ও প্রধানের তত্ত্বের তুরুপের তাস হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রশ্ন হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসের বাড়বাড়ন্তে যত মানুষ কাজ হারাবেন, তাতে কি শ্রমিকদের দর-কষাকষির শক্তি হ্রাস পাবে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে যে নতুন সম্পদ সৃষ্টি হবে, তা কি এই সরকারি ঋণের বোঝা সামলাতে পারবে? ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এগুলো অনেক বড় প্রশ্ন। তবে বরাবরের মতো অর্থনীতিবিদেরা এ ব্যাপারেও ঐকমত্যে আসতে পারবেন না। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনোভেশন এক অনলাইন আলোচনায় দুই লেখকের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর