img

দেশে অব্যাহত নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী মিছিল করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক ও সামাজিক দল ও সংগঠন।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা পৃথক কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলছেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী–শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা বাড়ছে। একই কারণে বাড়ছে হত্যা-গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা।

এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর করা। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করা যেতে পারে।

দেশে নারী-শিশুর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাৎকার ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজনৈতিক দল গণফোরামের একাংশের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ সকাল ১০টায় তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, দেশে এক নৈরাজ্যের অপশাসন চলছে। ধর্ষণের হাজারো রূপ দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি কত প্রকার ও কী কী, তা বাংলাদেশে সব দেখা যাচ্ছে। এই অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর জন্য গণজাগরণের বিকল্প নেই।

বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ‘ঘুণে ধরা’ মন্তব্য করে গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদ বলেন, ধর্ষণ-খুন-গুমের মাধ্যমে এই রাষ্ট্র ঘুণে ধরেছে। এর গোড়ায় যেতে হবে।

জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও বিচারই কেবল ধর্ষণের ঘটনা কমাতে পারে।

মানববন্ধনে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার, মহিউদ্দিন আহমেদ, লতিফুল বারী হামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন থেকে গণফোরামের এই অংশের নেতারা আট দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আর্থিক দণ্ডের বিধান যুক্ত করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করা, ভিকটিমের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভিকটিমের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদসহ শারীরিক ও ফরেনসিক পরীক্ষা নারী পুলিশ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে করা, ধর্ষণসহ সব মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা।

মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

সামাজিক প্রতিরোধের আহ্বান খেলাঘরের

জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন জাতীয় শিশু–কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সদস্যরা। দেশে শিশু হত্যা, নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে উল্লেখ করে খেলাঘরের সদস্যরা বলেন, এসব অপরাধ দমনে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও দ্রুত রায় কার্যকর করার পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ যদি আতঙ্কের হয়, তবে তাদের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হবে। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন হয়। কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা বলেন, যেখানেই শিশুর ওপর অত্যাচার, শিশুর অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়, সেখানেই খেলাঘর প্রতিবাদ জানায়। সারা দেশে শিশু হত্যা বাড়ছে, শিশুর প্রতি পাশবিক নির্যাতন বাড়ছে। এসব ঘটনায় খেলাঘর উৎকণ্ঠিত। তিনি আরও বলেন, শিশুর প্রতি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব, তেমনি নাগরিকেরও। শিশুর প্রতি অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই।

মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুজ্জামান শহীদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সহসভাপতি হান্নান চৌধুরী, সম্পাদক রাজন ভট্টাচার্য প্রমুখ।

ধর্ষণ-নিপীড়ন, গুম-খুন ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে আজ সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) অঙ্গসংগঠন যুব জাগপা।

মানববন্ধনে নেতারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবি তোলেন। মানববন্ধনে জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, দেশে গণতন্ত্রের সীমাহীন সংকট চলছে। এ কারণেই দেশে ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে।

ধর্ষকের উল্লাস ও ধর্ষণের শিকার নারীর কান্না একসঙ্গে চলতে পারে না। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল বের করা হয়।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর