img

মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। আর একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার।

চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। আইএমএফের এই পূর্বাভাস ঠিক থাকলে ভারত মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও নেপালের থেকে সামান্য এগিয়ে থাকবে। সে হিসাবে বাংলাদেশ আসলে ভারত, পাকিস্তান, নেপালের আগে চলে আসবে।

আইএমএফ গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) প্রকাশ করেছে। সেখানেই এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মূলত করোনার এই সময়ে ভারতের অর্থনীতি বেশি মাত্রায় সংকুচিত হবে বলে আইএমএফ বলছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে এবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। এ কারণেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। যেমন চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। আইএমএফের এই পূর্বাভাস ঠিক থাকলে ভারত মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও নেপালের থেকে সামান্য এগিয়ে থাকবে। সে হিসাবে বাংলাদেশ আসলে ভারত, পাকিস্তান, নেপালের আগে চলে আসবে।

বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের এই পিছিয়ে পড়া নিয়ে ভারতেও আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার দ্য ইকোনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (আরবিআই) অর্থনৈতিক সংকোচনের যে পূর্বাভাস দিয়েছে, আইএমএফ বলছে, সংকোচন তার চেয়েও বেশি হবে। আরবিআইয়ের হিসাবে দেশটির অর্থনীতি সাড়ে ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে। এর আগে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে। ফলে আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ঋণাত্মক হলে সংকোচনের দিক দিয়ে সারা বিশ্বেই ৩ নম্বরে চলে আসবে ভারত। ভারতের তুলনায় এগিয়ে থাকবে কেবল স্পেন ও ইতালি।

তবে এবার বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়লেও আগামী বছরেই ভারত বেশ ঘুরে দাঁড়াবে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। যেমন ২০২১ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ডলারের বিপরীতে মাথাপিছু জিডিপি ৮ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যেখানে বাংলাদেশের হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ আগামী বছরই আবার বাংলাদেশকে পেছনে ফেলবে ভারত। ফলে আগামী বছর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৩০ ডলারে উন্নীত হবে, যেখানে বাংলাদেশের ১ হাজার ৯৯০ ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটা ঠিক, গত কয়েক বছরে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের সঙ্গে ব্যবধান অনেক কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ।

এদিকে আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে শুধু গায়ানা ও দক্ষিণ সুদান। সব মিলিয়ে চলতি বছরে মাত্র ২২টি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়া উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, লাওস, গায়ানা, দক্ষিণ সুদান, মিসর, মিয়ানমার, রুয়ান্ডা, বতসোয়ানা, ভিয়েতনাম ইত্যাদি।

এদিকে এবারই প্রথম মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশটিকে ছাড়িয়ে গেছে আরও ছয় বছর আগে। যেমন ভারতের মেয়েদের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের শিক্ষার হার বেশি ও নারীপ্রতি জন্মহার কম। এ ছাড়া ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে নবজাতকের ও পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হারও কম। নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তাঁর নিজের দেশ ভারতের তুলনায় সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের এই সাফল্যের কথা বারবার লিখেছেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভারতের নাগরিকদের মাথাপিছু জিডিপি কমে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ আছে। একটি হলো বড় নোট বাতিল করা। আরেকটি করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা। ফলে ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত আসে। অন্যদিকে জিডিপিতে বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। করোনার সময়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। তবে ভারত আগামী বছর আবার ঘুরে দাঁড়ালে মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশকে আবার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর