চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকা কোষাগারে নিতে চায় সরকার
সরকারি ছয় সংস্থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চলতি সপ্তাহেই এসব সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দিতে বলেছে। পরে আরও কয়েকটি সংস্থা যুক্ত হবে এভাবে টাকা জমা দেওয়ার তালিকায়।
সরকার চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে নিজের খরচ মেটাতে সংস্থাগুলো থেকে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে চায়।
প্রথম দফা যে ছয়টি সংস্থাকে টাকা দিতে বলা হয়েছে: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক), মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (মোবক), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ ফাইন্যান্সিয়াল, পাবলিক নন-করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০’ অনুযায়ী সংস্থাগুলোকে অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংস্থাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চবক থেকে ৩ হাজার কোটি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ হাজার কোটি, ইপিবি থেকে ৩০০ কোটি, এনসিটিবি থেকে ২০০ কোটি, মোবক থেকে ২০০ কোটি এবং বিএসটিআই থেকে ১০০ কোটি অর্থাৎ মোট ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চায় সরকার।
এনসিটিবির চেয়ারম্যানের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এনসিটিবির পরিচালন ব্যয় ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার পড়বে, সে পরিমাণ অর্থ সংস্থাটি নিজের তহবিলে রাখবে। এর বাইরে যে টাকা থাকবে, তা থেকে আপাতত ২০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
এনসিটিবিকে দুটি কিস্তিতে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা ও আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে বাকি ১০০ কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেভাবে উদ্বৃত্ত তহবিল চাওয়া হয়েছে, সেভাবেই তা কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।’
ট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে এক মাস আগেই ৩ হাজার কোটি টাকা দিতে বলা হয়েছে ছয় মাসের মধ্যে। সংস্থাটিকে মাসে ৫০০ কোটি টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। দুই মাসে চবক ১ হাজার কোটি টাকা কোষাগারে জমা দিয়েছে। চবক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছি।’
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮টি সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে সরকার ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা পেয়েছিল। সংস্থাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মচারীরা বলছেন, সংস্থাগুলোর নিজেদেরই দায়িত্ব হচ্ছে উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া। নানা অজুহাতে তারা তা করছিল না। সে জন্য অর্থ বিভাগ এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিসভায় পাঠায় এবং মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে। এ বছরের শুরুর দিকে জাতীয় সংসদে এই আইন পাস হয়।
অনুমোদনের পর ব্রিফিংয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ দেশের মোট ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ‘অলস’ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে। এ হিসাব ২০১৯ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। ঠিক এক বছর পর চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সংস্থাগুলোর জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে জমার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের।
সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, অনেক সংস্থাই ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ খাচ্ছিল। বোনাসও খাচ্ছিল অনেকে। সে ক্ষেত্রে আইনটি খুবই সময়োচিত হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিকে যে ১৬ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এল, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের এই দুঃসময়ে নিঃসন্দেহে তা কাজে লেগেছে।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ