img

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। করোনার কারণে অর্থনীতি কর্মসংস্থান, রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তাই এত প্রবৃদ্ধি কমার কথা বলছে এই দাতা সংস্থা। আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বাজেট ঘোষণার সময় চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস এর ধারেকাছেও নেই। মূলত করোনায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ হওয়ায় এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করোনায় দেশের নিম্ন আয়ের রোজগার ও আয় কমে যাওয়া এবং প্রবাসী আয় হ্রাসের ফলে ভোগ বা খরচ করার প্রবণতা কমেছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে বন্যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, করোনার কারণে দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও উৎপাদন খাতের বেতনভুক্ত কর্মীদের জীবন-জীবিকার ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। শহরের শ্রমিকেরাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে করোনার সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬৮ শতাংশ শ্রমিকের জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে।

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার কারণে কর খাতের সংস্কার বিলম্বিত হলে কিংবা বড় প্রকল্পগুলোর খরচ বাড়লে আর্থিক খাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে। ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় ব্যাংক খাত থেকে অর্থ নেওয়া হলে তা সুদের হারে চাপ সৃষ্টি করবে এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ঠেকিয়ে ঋণের ঝুঁকি কমাতে ফলপ্রসূ আলোচনা দরকার। বহির্বাণিজ্য খাতেও চাপ বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তৈরি পোশাকের চাহিদা স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবাহ টেকসই নয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা কমে যেতে পারে। এতে প্রবাসী আয়ে কমে যেতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় কমেছে, ভোগও কমেছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে করোনার প্রভাব বেশি পড়েছে। এতে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যও বেড়েছে। তাঁর মতে, বাংলাদেশের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষকে সঠিকভাবে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা যায়নি।

ভারতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক

সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওই সব দেশের নিজ নিজ চলমান অর্থবছরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। আট দেশের মধ্যে ভারতসহ পাঁচ দেশের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। অন্য চারটি দেশ হলো মালদ্বীপ (মাইনাস সাড়ে ১৯ শতাংশ), আফগানিস্তান (মাইনাস সাড়ে ৫ শতাংশ), শ্রীলঙ্কা (মাইনাস ৬ দশমিক ৭ শতাংশ) ও পাকিস্তান (মাইনাস দেড় শতাংশ)। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভুটানে, ১ দশমিক ৮ শতাংশ। নেপালে চলতি অর্থবছরে দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ২০২০ সালে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থবছর একেক সময় ধরে হওয়ায় জিডিপিতে করোনার প্রভাবও একেক রকম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ভারতের অর্থবছর শুরু হয় এপ্রিল মাসে, শেষ হয় মার্চ মাসে। ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে। ফলে গত দুই প্রান্তিক ধরেই করোনার প্রভাব রয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থবছর জুলাই-জুন সময় ধরে। করোনার প্রভাব দুই অর্থবছরে ভাগ হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ সিফার বলেন, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য পারস্পরিক বাণিজ্য সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়। অর্থনীতি চাঙা থাকে।

তিনি আরও বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন বানানোর চেষ্টা চলছে। এই ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর