img

শিক্ষা মানুষের জীবনে আনে পরিবর্তন। সব বাধা দূর করাও যায় শিক্ষা দিয়ে। আর সেই কাজটি করতে চান আইএসের বোমা হামলা থেকে বেঁচে ফেরা আফগান তরুণী শামসিয়া আলিজাদা। শামসিয়া লাখো শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সেরাদের সেরা হয়েছেন। কয়লাশ্রমিকের মেয়ে প্রমাণ করেছেন, জীবনে কিছু করার ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শামসিয়া আলিজাদার স্কুল মাউড এডুকেশন সেন্টারে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আইএস। হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরেন শামসিয়া। এ ঘটনায় ৪০ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়, আহত হয়েছেন অনেকে। আতঙ্কিত হয়ে শামসিয়া মাউড এডুকেশন সেন্টার ছাড়তে বাধ্য হন। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁর। কিন্তু আবার স্কুলশিক্ষিকাদের অনুপ্রেরণায় ফেরেন স্কুলে। ওই হামলার ক্ষত মুছে ফেরেন ক্লাসে। এবার সেই শামসিয়া দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে নিজের নাম লেখানো শামসিয়া চান চিকিৎসক হতে।

আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেন। পড়ার সুযোগ মিললেই শিক্ষার্থী বেছে নেন নিজেদের পছন্দের পড়ার বিষয়। শামসিয়া জানিয়েছেন, তাঁর সাবেক সহপাঠী রাহিলা এ পরীক্ষায় ভালো ফল করে শীর্ষে যেতে পারতেন। ওই হামলায় রাহিলার মৃত্যু হয়।

আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের সময়ে নারীদের স্কুলে যাওয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। জাতিসংঘের এক তথ্যমতে, আফগানিস্তানের ৩০ শতাংশ নারী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এখনো ২২ লাখ নারী স্কুলে যায় না। মানুষের মনে এখনো তালেবানদের সেই আতঙ্ক রয়েছে। সেই আতঙ্ক জয় করে এগিয়ে যেতে চান শামসিয়া।

আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ বছরের শামসিয়া আলিজাদা ১ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছেন।

আফগান সরকার বর্তমানে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবানরা ফিরে আসাতে পারে, এমন খবর পাত্তা দিতে চান না শামসিয়া। রাজনীতির ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ কম। নিজের লক্ষ্য অর্জন নিয়েই চিন্তা তাঁর। শামসিয়া আলিজাদা বলেন, ‘আমি পড়াশোনার ব্যাপারটি নিয়েই ভাবতে চাই। তালেবানের ফেরার কথা চলছে, তা নিয়ে আমার কিছু ভয় আছে। কিন্তু আমার লক্ষ্য থেকে বিচ্যূত হতে চাই না। আশা হারাতে চাই না। কারণ, ভয়ের চেয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বড়।’

উত্তর আফগানিস্তানের কয়লাখনিতে শ্রমিকের কাজ করেন শামসিয়ার বাবা। শুধু মেয়ের পড়াশোনার জন্য বাবা পরিবার নিয়ে রাজধানী কাবুলে চলে আসেন। শামসিয়ার জেদ তাঁকে দেশের কাছে হিরো করে তুলেছে। এ দেশে শিক্ষা অর্জন করা খুবই কঠিন কাজ এবং যাঁরা এই প্রতিবন্ধকতা জয় করে এটি অর্জন করেন, তাঁরা প্রশংসার যোগ্য। তাঁর সাফল্যের খবর প্রকাশ হতেই নানা দিক থেকে প্রশংসা আসতে শুরু করে।

ফোনে রয়টার্সকে শামসিয়া বলেন, ‘পরিবারকে দেখা আমার দায়িত্ব। আমার আজকের জায়গায় আসার পেছনে আছে পরিবারের অবদান। এখন আমার স্বপ্ন হলো চিকিৎসক হওয়া এবং পরিবারের দেখভাল করা।’

কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য শামসিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁর এ সাফল্যে খুব খুশি। শামসিয়ার ফলাফলে খুশি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য আফগানিস্তানে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রস উইলসনও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শামসিয়াকে। টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘আপনার মেধা ও সাহস সন্দেহাতীতভাবে অনন্য। আপনার এ সাফল্যের ধারা দেখে বোঝা যায় দুই দশকে আফগানিস্তান কতটা অগ্রগতি করেছে।’ হামিদ কারজাই বলেন, পরীক্ষায় আলিজাদা এবং অন্য তরুণদের সাফল্য ‘আফগানিস্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশার’ চিহ্ন।

শামসিয়ার কাহিনিটি মিলে যায় অনেকটা পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে। শান্তিতে নোবেল পেয়ে মালাল এখনো নারীদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শামসিয়ার ঘটনাও যেন তেমনি। শামসিয়ার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। দেশ ও দেশবাসীর সেবায় নিজেকে যুক্ত রাখতে চান। আফগান কিশোরী কখনোই ভাবেননি যে তিনি পরীক্ষায় এত ভালো ফল করবেন।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর