img

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বছরের পাঁচ অধিবেশনে কোরাম সংকটে যে সময় ব্যয় হয়েছে, তার অর্থমূল্য ২২ কোটি টাকার বেশি। একাদশ সংসদের ৫টি অধিবেশন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন পার্লামেন্ট ওয়াচে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ বুধবার এক ওয়েবিনারে এটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম পাঁচটি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৬১টি। প্রতিদিন গড়ে ১৯ মিনিট ছিল কোরাম সংকট। মোট কোরাম সংকট ছিল ১৯ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। কোরাম সংকটের এই সময়ের আর্থিক মূল্য ২২ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৭টাকা।

জাতীয় সংসদে মোট সদস্য ৩৫০। কোরাম পূর্ণ না হলে সংসদের বৈঠক চালানো যায় না। ন্যূনতম ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের কোরাম পূর্ণ হয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছে ৩২ মিনিট। গত সংসদে বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছিল ৩১ মিনিট। তবে বিল পাস প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের অনাগ্রহ লক্ষণীয়। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বছরে সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটেনি বিরোধী দলের ওয়াকআউটের ঘটনা।

এই সময়ে সংসদীয় কমিটিগুলোকে খুব একটা কার্যকর দেখা যায়নি। টিআইবি বলছে, পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, এই সংসদ নিয়ম রক্ষার সংসদে পরিণত হয়েছে। এখানে পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলনাযোগ্য নয়।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, অষ্টম ও নবম সংসদে সমস্যার মূল যে জায়গা সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি অগ্রহণযোগ্য ছিল। সেটি বন্ধ হয়েছে চড়া দামে। এত বেশি চড়া দামে যে মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনের সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা রদবদলের সম্ভাবনা দূরীভূত হয়েছে। তারই প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি জাতীয় সংসদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদে একদলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ফলে সংসদের মৌলিক দায়িত্ব আইন প্রণয়ন, সরকারের জবাবদিহি এবং জন প্রতিনিধিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি না।'

একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে আছে জাতীয় পার্টি। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোটগত নির্বাচন করেছিল। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিরোধী দল থাকলে সংসদ বর্জন করে, সেই সংস্কৃতি আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল। বর্জন বন্ধ হয়েছে। কারণ কার্যকর বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেটি আমাদের কাছে নেই। এবারে সংসদে যাদের প্রধান বিরোধী দল বলা হয়েছে বা উপস্থাপন করা হয়েছে তারা কিন্তু বিরোধী দলে বসবেন সেই প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচন করেন নাই। তারা ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

কিন্তু তাদের বসানো হয়েছে বা বসেছেন এমন একটি ভূমিকায় যেটার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। বাস্তবে প্রধান বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেটি কিন্তু অনুপস্থিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে ৬১% ব্যবসায়ী, পেশায় রাজনৈতিক আছেন মাত্র ৫%। অন্যদিকে ভারতের লোকসভায় রাজনীতিক আছেন ৩৯শতাংশ এবং ব্যবসায়ী আছেন ২৩ শতাংশ। দিন দিন দেশের সংসদে ব্যবসায়ী সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবেদনটিতে টিআইবি পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে বিশেষত আইন প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা আরও জোরদার হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন মহাজোটের একটি দল নিয়ম রক্ষার প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় তাদের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর