ধুম পড়েছে ল্যাপটপ কেনার
দেশে ল্যাপটপের বাজারে বিক্রি বেড়েছে সাধারণ সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। মাইক্রোসফট অ্যাকটিভেশন তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ১৫ হাজার ৮৩৭টি নতুন ল্যাপটপ মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে ইন্টারনেটে সচল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে কমতে থাকে ল্যাপটপের বিক্রি। ফলে এপ্রিলে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭৯টি নতুন ল্যাপটপ সচল হয়। জুনে বাজার পুরোপুরি সচল হলে সে মাসে ২০ হাজার ৭৮৭টি নতুন ল্যাপটপ সচল হয়। জুলাইতে সচল হয় ২৬ হাজার ১৪৮টি নতুন ল্যাপটপ। আগস্টে এসে আবার কমতে থাকে বিক্রি।
মাইক্রোসফটের অ্যাকটিভেশনের উপাত্তের সংখ্যার সঙ্গে আরও ২০ শতাংশ যোগ করে দেশের ল্যাপটপের বিক্রির হিসাব করা হয়। কারণ, অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেম আলাদা এবং কিছু কম্পিউটার কখনো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় না।
বাংলাদেশের বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করা তিন ল্যাপটপ ব্র্যান্ড এইচপি, ডেল, ও আসুসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়েছে প্রতিটি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের বিক্রি। দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনও জানিয়েছে তাদের ল্যাপটপ বিক্রি দ্বিগুণের বেশি হয়েছে, এমনকি উচ্চ মূল্যের ব্র্যান্ড অ্যাপলেরও ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে আগের চেয়ে।
এইচপি ব্র্যান্ড বাংলাদেশের ল্যাপটপের বাজারের ৫০-৫৫ শতাংশ চাহিদা মেটায়। এইচপির বাংলাদেশ প্রধান কাউসার আহমেদ বলেন, যদি মার্চ মাস থেকে হিসাব করি, মে পর্যন্ত স্বাভাবিক বিক্রির থেকে কম বিক্রি হয়েছে। তবে জুনে এই চিত্র একদম রাতারাতি বদলে গেছে। বর্তমানে এইচপি ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে তিন গুণ।
এইচপির মতোই বেড়েছে আসুসের বিক্রিও। আসুসের বাংলাদেশ প্রধান মো. আল ফুহাদ বলেন, করোনার অতিমারি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। করোনার আগে থেকে তো বটেই, গত দুই বছরের তুলনায়ও আসুসের ল্যাপটপ বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। এখন বাজারের ৩৮ শতাংশ আসুসের দখলে।
বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে ডেল কম্পিউটারেরও। ডেলের বাংলাদেশ প্রধান আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। একটি পরিবারের আগে একটি ল্যাপটপ ছিল, এখন গড়ে তা দাঁড়িয়েছে তিনটিতে।’
উচ্চ মূল্যের ল্যাপটপ ব্র্যান্ড অ্যাপলেরও বেড়েছে বিক্রি। অ্যাপলের বাংলাদেশে অনুমোদিত বিক্রেতা এক্সিকিউটিভ মেশিনের ম্যানেজার মাহমুদ হাসান মাশফিক জানান, অ্যাপলের ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। উচ্চ মূল্য হওয়া সত্ত্বেও ক্রেতাদের কাছে যথেষ্ট চাহিদা আছে।
দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের কম্পিউটার প্রজেক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী জানান, করোনায় গত ছয় মাসে ল্যাপটপের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে সংযোজন করা ব্র্যান্ডটির। গত বছরের এই সময়ের তুলনায়ও বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণ।
চাহিদা এখনো অনেক থাকলেও জোগান দেওয়া নিয়ে আছে সংশয়। বাংলাদেশ যত ল্যাপটপ আমদানি করে, তার অধিকাংশের উৎপাদন হয় চীনে। করোনার উৎপত্তিস্থল দেশটিতে জানুয়ারি থেকেই উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন যদিও উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। আবার বিশ্বব্যাপী চাহিদার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো।
আইডিবির কম্পিউটার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানেই তাক খালি। আরএস কম্পিউটারের মালিক পীযূষ চক্রবর্তী বলেন, ‘যদি অর্ডার দিই ১০০ ইউনিট, পণ্য হাতে পাই ৮–১০ ইউনিট।’
উৎপাদিত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহনব্যবস্থার অসুবিধায় আছে ল্যাপটপ ব্র্যান্ডগুলো। অ্যাপল ব্র্যান্ডের ডিসট্রিবিউটর এক্সিকিউটিভ মেশিনের সেলস কনসালট্যান্ট মো. রেদোয়ান ইসলাম বলেন, বিমানযোগে পণ্যের চালান করেও জোগান মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানান তিনি, ‘আগে যেখানে মাসে একবারমাত্র শিপমেন্ট আসত, এখন তা দুবার হচ্ছে।’
জুলাইয়ের পর আগস্টে এসে আবার কমতে শুরু করেছে ল্যাপটপের বিক্রি। অফিস খুলে যাওয়ায় বিক্রি কমে এলেও তা এখন পর্যন্ত জানুয়ারির থেকে বেশি। বাজারের এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী ল্যাপটপ ব্র্যান্ডগুলো। তাদের মতে, করোনার নতুন স্বাভাবিক জীবনযাপনে ল্যাপটপ মানুষের জীবনে যে অবস্থান তৈরি করেছে। এমন সব মানুষও ল্যাপটপ কিনছেন, যাঁরা আগে ল্যাপটপ একদমই ব্যবহার করতেন না।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ