img

চিকিৎসাসেবায় ওষুধ অপরিহার্য বিষয়। অসুস্থ রোগীর সুস্থতায় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। রোগীর জন্য নিরাপদ ওষুধ গ্রহণ নিশ্চিত করা চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টদের দায়িত্ব।

এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ওষুধকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো ওষুধ মূল্যায়ন করে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো খুঁজে বের করা হয়। এতে ওষুধ সম্পর্কিত যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ফার্মাকোভিজিল্যান্স প্রক্রিয়াটি ওষুধ বাজারজাত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। জনস্বাস্থ্য সেবায় ফার্মাকোভিজিল্যান্সের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করেন।

রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিতে ফার্মাকোভিজিল্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম। ওষুধ সেবনের পর রোগীর শরীরে কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তার নজরদারি করার দায়িত্ব চিকিৎসক, ওষুধ কোম্পানি ও সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর—সবার।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, আমাদের দেশে রোগীদের জন্য নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা যায়। যেমন সবার প্রথমে আসে ফার্মাসিস্টদের কথা। একটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একজন চিকিৎসককে অবগত করা ফার্মাসিস্টদের অন্যতম প্রধান কাজ। সেটি জেনেই চিকিৎসক ঠিক করেন কোন ওষুধ রোগীর জন্য ভালো হবে বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাঁরা রোগীকে জানাতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে চিকিৎসকের যোগাযোগ খুব একটা দেখা যায় না।

আবার বিভিন্ন দেশে দেখা যায় ওষুধ সেবনের পর রোগীর কোনো সমস্যা হলে সে ব্যাপারে রোগী বা চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানিকে সরাসরি জানাতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে একেবারেই উদাসীন। যদিও এখন কিছু স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিতে এ ধরনের যোগাযোগের সুযোগ আছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়।

আমাদের দেশে ওষুধের ডোজ নিয়ে গবেষণার জায়গাটাও খুবই অবহেলিত। ওষুধের ডোজ ঠিক না হলে নানা রকমের বিপর্যয় হতে পারে। ডোজ কম হলে ওষুধ ঠিকমতো কাজ করবে না আবার বেশি হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশে কয়েক বছর আগেও দেখা গেছে তরল জাতীয় ওষুধ মাপার ক্ষেত্রে আমরা বাসায় থাকা সাধারণ চা–চামচ ব্যবহার করতাম। এতে ডোজের হেরফের হতো, কারণ একেক চা–চামচের মাপ একেক রকম হয়ে থাকে। গবেষণার মাধ্যমে এ ব্যাপারে জানার পর আমাদের দেশে ওষুধ প্রশাসন প্রতিটি ওষুধ কোম্পানিকে ওষুধের ডোজ অনুযায়ী চা–চামচ ওষুধের প্যাকেটের সঙ্গে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ রকম ওষুধের ডোজ নিয়ে আরও অনেক গবেষণা হওয়ার দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা আমাদের দেশে আদর্শ ফার্মেসি বাড়ানোর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। আমাদের দেশে ওষুধের দোকানগুলোকে আমরা ফার্মেসি বললেও আদতে সেগুলো ফার্মেসি নয়। সেগুলো হলো সাধারণ ড্রাগ স্টোর। ড্রাগ স্টোর ও ফার্মেসির মধ্যের পার্থক্য হলো, ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকে, ড্রাগ স্টোরে থাকে না। ওষুধ কেনার সময় একজন ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশন যাচাই করে দেখেন এবং রোগীকে একটি ওষুধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ধারণা দিতে পারেন। আমাদের দেশে সর্বসাকল্যে সাড়ে ছয় শর মতো ফার্মেসি আছে। সব রোগীর জন্য নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিত করতে এর চেয়ে আরও অনেক বেশি ফার্মেসির প্রয়োজন।

এ ধরনের ঘাটতি পূরণের যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেজ্ঞরা। পাশাপাশি সুস্থতার জন্য ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন। তাঁরা মনে করেন, ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে সরকার, ওষুধ কোম্পানি, চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর