img

অবশেষে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার হলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ এক দফা নাকচের পর আজ রোববার সেই পেঁয়াজে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে রাজি হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। এর আগে আজই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমদানি শুল্ক কমানোর সারসংক্ষেপে সই করেন।

 অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে পেঁয়াজে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হয়। আগামী মার্চ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

যখন পেঁয়াজের সংকট থাকে না 

ভারত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর দেশে পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়ায়। অবশ্য কয়েক দিন ধরে দাম পড়তি। ইতিমধ্যে ভারতের বিকল্প বাজার হিসেবে মিশর, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বড় ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহী হচ্ছেন। অবশ্য সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজভর্তি ট্রাক ছাড়ার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে ভারত।

পেঁয়াজের অনুৎপাদনশীল মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস। এ সময়ের কথা বিবেচনা করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করে এনবিআরকে চিঠি লেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে নেতিবাচক প্রভাব যাতে না পড়ে, সে জন্য এই অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এনবিআর সেই দাবি নাকচ করে দেয়। কাকতালীয়ভাবে ভারত যেদিন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিল, সেদিনই বাণিজ্যসচিবকে নাকচের চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে দেশের চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। পেঁয়াজের আমদানি–নির্ভরশীলতা বাড়বে। সার্বিকভাবে দেশের পেঁয়াজচাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর ৫% আমদানি শুল্কের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দামে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।

পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবারও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করে। এবারের অনুরোধ আর ফেলতে পারেনি এনবিআর।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে বাংলাদেশের বাজারে দাম আরেকটু কমেছে। ভারত বাংলাদেশে ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করবে, এমন খবরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আজ রোববার দাম আরও কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সকালে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে। এখানকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, গতকাল দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তবে আজ সকালে ৬৫ টাকাতেই বিক্রি করলাম। দাম একটু কমের দিকেই।

গতকাল শনিবার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়, যা দুই দিন আগের তুলনায় ২০ টাকার মতো কম। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে।

জানতে চাইলে শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আজ দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। কারণ হলো, প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই কম।

ঢাকার খুচরা বাজারেও দাম কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা দোকানে গতকাল দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতারাও ক্রেতা কম থাকার কথা বলছেন।

স্থলবন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশমুখী পেঁয়াজবাহী ট্রাক গতকাল ছাড়ে ভারত। গতকাল পেঁয়াজ নিয়ে এসব ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শুধু গত সোমবার আমদানির প্রক্রিয়া শেষ করে যেসব ট্রাক অপেক্ষারত ছিল, সেগুলোকেই বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

পেঁয়াজ নিয়ে আসা ট্রাকের চালক ও খালাসের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, পাঁচ দিন ধরে আটকে থেকে পেঁয়াজে পচন ধরেছে। ট্রাকভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ পচে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

ভারত গত সোমবার হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে সন্ধ্যায়। তার আগে সারা দিন পেঁয়াজ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেনি। এর মধ্যে বেশ কিছু চালানের আমদানির প্রক্রিয়া শেষের পথে ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। অবশ্য তিন দিন ধরে বাজারে দাম পড়তি।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয় গতকাল বেলা একটার দিকে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ঢোকা পেঁয়াজের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পচে গেছে।

ভারতের ট্রাকচালক রমেশ পাড়ওয়ালও একই কথা জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘোজাডাঙ্গায় (ভোমরার ওপাশে ভারতীয় বন্দর) পেঁয়াজ নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অপেক্ষায় ছিলেন।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় পেঁয়াজেরও প্রায় অর্ধেক পচে গেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পেঁয়াজের ট্রাক ঢোকা শুরু হয়।

বন্দর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন বলেন, পেঁয়াজের ট্রাক বন্দর এলাকায় ঢোকার পরই দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু করে। বিকেলে ট্রাক থেকে পেঁয়াজ নামানোর পর দেখা যায় প্রায় অর্ধেক নষ্ট।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ ঢোকা শুরু করে বেলা তিনটার দিকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩১টি ট্রাকে ৭২১ টন পণ্য প্রবেশ করে। আমদানিকারক আকাশ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর রহমান বলেন, পাঁচ দিন বৃষ্টি ও গরমে আটকে থেকে অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচে যেতে পারে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় কেনা পড়েছে তাঁর।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ভারত থেকে পেঁয়াজবোঝাই কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। তবে বেনাপোলের ওপাশে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে পেঁয়াজবোঝাই অন্তত পাঁচটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, পেট্রাপোলে আটকে থাকা পেঁয়াজের ট্রাক রপ্তানিকারকেরা সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দিকে নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর