img

সুস্থ থাকার জন্য শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে একজন মানুষ খুব সহজেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। করোনা মহামারির এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হলো এসকেএফ জিঙ্ক নিবেদিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা’র এ পর্বে। এবারের বিষয়: রোগ প্রতিরোধে ডাক্তারের পরামর্শ। অতিথি হিসেবে ছিলেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. সাকলায়েন রাসেল। সঞ্চালনায় ছিলেন পুষ্টিবিদ রুবাইয়া পারভীন রীতি। অনুষ্ঠানটি ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীরা মূলত রোগ হলে কী চিকিৎসা করা হবে, কীভাবে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এ জন্য কী ওষুধ সেবন করতে হবে—এসব নিয়ে বেশি গবেষণা করে থাকেন। তবে এই করোনা মহামারি আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আর সেটা হলো রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা। আমরা আগে থেকেই জানতাম যে প্রতিরোধ সব সময় প্রতিকারের চেয়ে ভালো। তবে এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ রোগমুক্ত থাকার প্রথম উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ করা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাবার আর তার ভেতরে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের একটি বিরাট ভূমিকা আছে। চিকিৎসকেরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে খাদ্য উপাদানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন, সেটি হলো জিঙ্ক। এটি শরীরে অল্প পরিমাণে লাগে। তাই বলে একে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। প্রত্যেকেরই উচিত রক্তে জিঙ্কের স্বাভাবিক মাত্রা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা।

এরপরই আসে ভিটামিন ডি-এর কথা। ভিটামিন ডির প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্য। কিন্তু আমরা কালো হয়ে যাওয়ার ভয় বা ঘাম–গরমের জন্য সব সময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকি। তার ওপর আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের গায়ের রং খুব একটা ফরসা নয়। যার জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শে গেলেও শরীর ভিটামিন ডি তৈরি হতে দেরি হয়। এই শ্যামবর্ণ ত্বক আমাদের বিভিন্ন রকমের ত্বকের ক্যানসার থেকে বাঁচিয়ে দিলেও এটি ভিটামিন ডি তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। এ জন্য এ দেশে ভিটামিন ডির ঘাটতির এক ‘মহামারি’ অনেক আগে থেকেই চলছে। এই ঘাটতি এড়াতে আমাদের প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ৩টার ভেতর হাত-পা-মুখ খুলে কিছু সময়ের জন্য হলেও রোদে যেতে হবে। এ ঘাটতি পূরণের জন্য চিকিৎসকেরা রোগীর বয়স, ওজন দেখে মুখে খাওয়ার বা ইনজেকশনে করে ভিটামিন ডি দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া দেশীয় শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। কারণ, এসবে আছে অনেক ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে পাওয়া এবং বিভিন্নভাবে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই সময়ে দেখা যাচ্ছে, অনেকে ইচ্ছামতো জিঙ্ক বা ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে ভাবছেন যে তিনি করোনা মোকাবিলা করতে পারবেন। আসলে ব্যাপারটা মোটেও ঠিক না। আমাদের সবারই জন্মগতভাবে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে, আর বাকিটা আমরা ছোটবেলা থেকে কোন পরিবেশে মানুষ হয়েছি, কী রকম পুষ্টিকর খাবার খেয়েছি, তার ওপর নির্ভর করে। কাজেই হঠাৎ করে কোনো একটা কিছু বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে, ধারণাটা একদমই ভুল।

আমরা জানি যে করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। ফুসফুসের মধ্যে টাইটোনিমোসাইড বা টি সেলে ভাইরাস বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত স্থান। যখন শরীরে কোনো ভাইরাস ঢোকে, তখন প্রথমে আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই কোষগুলোই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, তাদের কোষ সক্রিয়তাও বেশি থাকে। আবার অনেক সময় ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শরীর প্রচুর পরিমাণে কোষ ছাড়তে থাকে। এই অবস্থাকে শরীরে সাইটোকাইন স্ট্রম বলে। ফলে, শরীর আরও অসুস্থ হয়ে যায়। তখনই রোগীকে আইসিইউতে নিতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান কার্যকর উপাদান হচ্ছে জিঙ্ক। এ ব্যাপারে আমরা খুবই উদাসীন। চিকিৎসকেরা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের বিরতি দিয়ে দিয়ে জিঙ্ক ট্যাবলেট খেতে প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। সে জন্য তারা আগে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি কতটুকু এবং ব্যক্তির ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করেন।

এ ছাড়া যারা একেবারে খেতে পারে না বা মুখে রুচি নেই, তাদের জিঙ্ক ওষুধ দেওয়া হয়। জিঙ্ক মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে জিঙ্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ট্যাবলেটের পাশাপাশি আমরা পেতে পারি মাংস, গরুর কলিজা, দুধ, ডিমজাতীয় খাবারে।

শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না থাকে, তাহলে আমাদের প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, একজন চিকিৎসকই বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারেন কার শরীরে কিসের কতটুকু ঘাটতি আছে এবং সেভাবে ওষুধ ও খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর