img

করোনার দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার হয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার আগে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে গড়ে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৫ জন হয়েছে। এর মানে, প্রতি চারজন কাজপ্রত্যাশী তরুণের মধ্যে একজন বেকার।

বর্তমানে নতুন চাকরির সুযোগ বেশ সীমিত। করোনায় বেকার হয়ে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন নতুন চাকরিপ্রত্যাশীরাও। পুরোনো ২৭ লাখ বেকার তো আছেনই। ব্যবসা-বাণিজ্যে টান পড়ায় ছোট-বড় কোম্পানিগুলো আগের মতো নতুন জনবল নিয়োগ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না।

করোনা মহামারির কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যেই বেকার হওয়ার প্রবণতা বেশি। সব ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির গতি কমায় কত তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়েছেন—আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশে তরুণদের কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছে। আইএলওর এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

আইএলওর প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশে করোনায় চাকরি হারানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে। ওই তালিকায় আরও আছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কম্বোডিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

করোনার কারণে কত তরুণ বেকার হলেন, তার হিসাব করতে গিয়ে দুটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেছে আইএলও। একটি হলো করোনার প্রাদুর্ভাব তিন মাস থাকলে কত বেকার হয়েছে, ছয় মাস হলে চিত্রটি কেমন হবে, তা দেখানো হয়েছে। তবে তালিকায় থাকা বেশির ভাগ দেশেই করোনার প্রাদুর্ভাব ছয় মাস ধরে চলছে। আইএলও বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেছে, করোনা সংকট ছয় মাস প্রলম্বিত হওয়ায় বাংলাদেশের কাজপ্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার হয়ে গেছেন। ২০১৯ সালের হিসাবে তা ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। করোনার কারণে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে।

আইএলও আরও বলেছে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ছাঁটাই হয়েছে। তরুণদের ছাঁটাই করা তুলনামূলক সহজ। আবার কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমানো হয়েছে। অনেকে আনুষ্ঠানিক খাত থেকে অনানুষ্ঠানিক খাতে চলে গেছেন। তাই প্রকৃত অর্থে কত তরুণ বেকার হয়েছেন, তা নির্ধারণ করা কঠিন। করোনায় তরুণদের চাকরি বেশি গেছে। একটি দেশের উৎপাদন ও শ্রমের চাহিদার ভিত্তিতে বেকারের হিসাবটি করা হয়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাব ছয় মাস অতিক্রম করায় সব মিলিয়ে ওই ১৩টি দেশে ১ কোটি ৪৮ লাখ তরুণ কাজ হারিয়েছেন বলে মনে করছে আইএলও। ভারতে সবচেয়ে বেশি, ৬১ লাখের বেশি তরুণ বেকার হয়ে গেছেন।

বিডিজবস সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে মার্চের তুলনায় ৮০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে। মে মাসে কমেছে ৭০ শতাংশ। জুন-জুলাই মাসে এ পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। তবে এখনো চাকরির বিজ্ঞাপনের প্রবাহ আগের জায়গায় ফিরে আসেনি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখনো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে। বিডিজবসের চাকরির খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক খোঁজা হচ্ছে। একদম নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির খবর তেমন একটা নেই।

নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের কী হবে?

পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৮ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে আসেন। এর মধ্যে ছয় থেকে সাত লাখ বিদেশে যান। বাকি ১১ থেকে ১২ লাখ লোকের অভ্যন্তরীণ বা দেশেই কর্মসংস্থান হয়। করোনার কারণে বিদেশ থেকে শ্রমিকেরা ফিরে আসছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতেও মন্দাভাব। সেখানেও প্রবাসী শ্রমিকদের চাকরির সুযোগ কমে গেছে।

শ্রমবাজারে ২৯ বছরের কম বয়সী তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ যেমন বেশি, তেমনি তাঁদের মধ্যেই বেকার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৬-১৭) অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে ৬ কোটি ৩৫ লাখ লোক আছেন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ২ কোটি ৮৩ হাজার। তাঁদের মধ্যে কর্মজীবী ১ কোটি ৭৯ লাখ। দেশে ওই সময়ে বেকার ছিল ২৭ লাখ। ওই বেকারদের মধ্যে ২২ লাখের বয়স ২৯ বছরের কম। করোনার কারণে তরুণ বেকারের সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরও বেড়েছে। ফলে নতুন চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়ার পর বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলমের মতে, নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রথমেই অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে হবে। দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্য আগের অবস্থায় আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন নতুন কলকারখানা হবে, কাজের সুযোগ বাড়বে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর