img

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে পদ্মা নদী হয়ে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা হবে। শিগগিরই এই পথে পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যের চালান যাবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উভয় দেশ এই নৌপথে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। দুই মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক চালান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা এখন নৌপথটির অবকাঠামো পর্যালোচনা করছেন।

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) রফিকুল ইসলাম বলেন, এই পথ চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজ হবে। নৌপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায় এবং তা সাশ্রয়ী।

স্বাধীনতার পর থেকে এত দিন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকলের আওতায় শুধু কলকাতা-নারায়ণগঞ্জ-কলকাতায় নৌপথে বাণিজ্য হতো। কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফ্লাই অ্যাশ, ক্লিঙ্কার, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। আর বাংলাদেশ থেকেও কিছু পণ্য যায়। এখন কলকাতা ছাড়াও ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য নৌ প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা নেয় ভারত। এর আওতায় ভারত বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহার করে কলকাতা-পাণ্ডু (আসাম); কলকাতা-করিমগঞ্জ (আসাম) এবং কলকাতা-আশুগঞ্জ-আগরতলায় পণ্য নেয়। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। এখন পথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এই পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি নৌযানে ২০০-৩০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। আর বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা বেশি থাকলেও প্রমত্তা পদ্মায় স্রোত বেশি থাকে। তখন অবশ্য পণ্য পরিবহন কিছুটা কঠিন হবে। ইতিমধ্যে গোদাগাড়ী এলাকায় একটি শুল্ক কার্যালয় চালুর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের ‘পাকুর পাথর’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বেশ উন্নতমানের পাথর। এখন সড়কপথে পাথর আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ছে। গোদাগাড়ী-মায়া নৌপথটি মূলত পাকুর পাথর আমদানিতে বেশি ব্যবহার হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত শনিবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে নৌপথে পণ্যের চালান গেছে। প্রথম চালানে বাংলাদেশি এক কোম্পানি ২০০ ব্যাগ সিমেন্ট পাঠিয়েছে। ওই নৌপথে কুমিল্লার গোমতী নদী দিয়ে মুরাদনগর, দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কুমিল্লা সদর, বিবিরবাজার সীমান্ত হয়ে ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পণ্য আনা–নেওয়া হবে। এই পথের দূরত্ব ৯২ কিলোমিটার। গত শনিবার পাঠানো পণ্যের চালানটি সীমান্তের ওপারে সোনামুড়া নৌ জেটিতে গ্রহণ করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগটি অবশ্যই ইতিবাচক। ত্রিপুরার পর মুর্শিদাবাদের সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ চালু করা হচ্ছে। বাণিজ্য উপযোগী নৌপথের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। ভারত একটি বড় বাজার। আমরা ভারত থেকে বেশি আমদানি করি, রপ্তানির পরিমাণ কম। এসব নৌপথ দিয়ে ভারতে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করা দরকার। তবে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে অশুল্ক বাধাও দূর করতে হবে।’

নৌপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ক্রমে বাড়ছে। গত ১০ বছরে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে ১৪ লাখ ২৯ হাজার টন পণ্য আনা-নেওয়া হয়েছে। ঠিক ১০ বছর পর, অর্থাৎ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৬৯ হাজার টন। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৫১টি চালান গেছে।

এই বিষয়ে সেলিম রায়হান বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের নদীগুলো আঞ্চলিক বাণিজ্যে সাশ্রয়ী পথ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তাই বাংলাদেশের নদীগুলোর খনন ও নদীশাসন করতে অংশীদারত্বের ভিত্তিতেই বিনিয়োগ করা উচিত।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর