img

প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জেটির অর্ধেকেই কোনো জাহাজ নেই। প্রতিদিন ফাঁকা জেটিতে ভেড়ানোর জন্য জাহাজের অপেক্ষার তালিকাও খুবই ছোট। জাহাজ না থাকায় ৩ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৮টি সমুদ্রগামী জেটির গড়ে ৬টি ফাঁকা থাকছে। আগস্টেও বেশির ভাগ সময় এক বা একাধিক জেটি ফাঁকা ছিল।

দুই কারণে জেটি ফাঁকা থাকার কথা বলছেন বন্দর কর্মকর্তারা। করোনার প্রভাবে গত এপ্রিল মাসে আমদানি–রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন কমে যায়। এরপর অবশ্য ধারাবাহিকভাবে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে। তবে এখনো গত বছরের তুলনায় তা কম। যেমন এ বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট, এই ৫ মাসে ১০ লাখ কনটেইনার পরিবহন হয়। গত বছরের একই সময় পরিবহন হয় সাড়ে ১১ লাখ কনটেইনার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় কনটেইনার পরিবহন কমেছে ১৩ শতাংশ।

আবার করোনার শুরুতে জাহাজ ও কনটেইনারজট সরাতে পণ্য খালাসের কার্যক্রমে তদারকি বাড়িয়েছে বন্দর। তিন জেটিতে প্রতিটা জাহাজে বাড়তি একটি করে ক্রেন দিয়ে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ না থাকলে সেখানে কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের ফলে বন্দরে জাহাজ থেকে দ্রুত কনটেইনার বা পণ্য খালাস হচ্ছে। এতে সেবার মান বেড়েছে বন্দরে। বন্দরের হিসাবে, এখন সাড়ে চার বছরে সবচেয়ে কম সময়ে আমদানি পণ্য হাতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, আমদানি পণ্য কমার তালিকায় যদি ধারাবাহিকভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল থাকে, তা অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। কারণ, তাতে সামনে উৎপাদন কমবে। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। তবে বিলাসপণ্য কমে গেলে তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছরের মতো পণ্য আমদানির চাপ নেই, এটা ঠিক। তবে ব্যবসায়ীরা বন্দর চত্বর থেকে আগের চেয়ে দ্রুত পণ্য খালাস করে নিচ্ছেন। এর প্রভাবে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসও দ্রুততর হয়েছে। বন্দর কার্যক্রমে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার শুরুর দিকের তুলনায় পণ্য আমদানি–রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সামনে কনটেইনার বা পণ্য পরিবহন বাড়বে। এরপরও যাতে জটের মুখোমুখি হতে না হয়, সে জন্য আগাম প্রস্তুতি আছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৩৫ শতাংশ ওঠানো–নামানো হয় ১৮টি জেটিতে। এর মধ্যে কনটেইনারের পুরোটাই এবং সাধারণ পণ্যের একাংশ জেটিতে ওঠানো–নামানো হয়। বাকি পণ্য বিশেষায়িত জেটি ও বহির্নোঙরে ওঠানো–নামানো হয়। শিল্পের আমদানি করা কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য, প্রকল্পের সরঞ্জাম ও রপ্তানির পুরোটাই জেটিতে জাহাজ থেকে ওঠানো–নামানো হয়।

শিপিং–বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম ‘লয়েডস লিস্ট’ বলেছে, করোনার প্রভাবে বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বের বেশির ভাগ বন্দরে কনটেইনার পরিবহন কমেছে। এই তালিকায় আছে চীনের সাংহাই, শেনজেন, সিঙ্গাপুরের সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান, ইউরোপের প্রধান বন্দর নেদারল্যান্ডের রটারড্যামও। এই তালিকায় আছে চট্টগ্রাম বন্দরও।

কনটেইনার ছাড়াও জেটিতে প্রতিনিয়ত সরকারি–বেসরকারি প্রকল্পের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিবাহী জাহাজ আগমনও কমেছে। প্রকল্পের যন্ত্রপাতি পরিবহনকারী জাহাজগুলোর স্থানীয় দুটি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ইনস্কেপ ও কসকল। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খান বলেন, এপ্রিলের আগেও প্রতি মাসে তাঁর দুই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ থেকে ছয়টি জাহাজে পুরোপুরি বোঝাই করে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আনা হতো। এখন আসছে দু–তিনটি, তা–ও ধারণক্ষমতার অর্ধেক।

আমদানির চাপ কম ও জাহাজ থেকে খালাস দ্রুত হওয়ায় পণ্য হাতে পেতে আগের মতো অপেক্ষা করতে হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। এখন বহির্নোঙরে জাহাজ আসার পরই জোয়ারের সময় হলেই জেটিতে ভেড়ানো হচ্ছে।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, এ বছরের জুলাই মাসে প্রতিটি জাহাজকে বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর জন্য গড়ে ৩৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। গত সাড়ে চার বছরে এর চেয়ে কম সময়ে জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো যায়নি। আগস্ট মাসের হিসাব প্রকাশ না হলেও তা ২৪ ঘণ্টার কম বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পণ্য আমদানির চাপ কম থাকায় বন্দরের সেবার মান বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে সামনে কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের চাপ বাড়বে। এটা বিবেচনায় নিয়ে বে টার্মিনালের মতো বন্দরের সম্প্রসারণের বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

বন্দর ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি কাঁচামাল আমদানি হয় তৈরি পোশাকশিল্প খাতের। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ ছালাম বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকের চেয়ে আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে। এরপরও এখন যেভাবে পণ্য হাতে পাচ্ছি, এ রকম যদি সব সময় থাকে, তাহলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। সামনে যাতে এই সুবিধা থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বন্দর সুবিধায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে যাবে পোশাক খাত।’

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর