img

ইসরায়েল ও আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার একটি ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড আর দখলে নেবে না, বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে আমিরাত, এমন শর্তে দুদেশের এই চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তলে তলে করা এই চুক্তিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। আরব আমিরাতের এই পদক্ষেপকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ। তবে ইসরায়েল এটাকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।

বছরের পর বছর ধরে গোপনে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি থাকলেও সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না সংযুক্ত আরব আমিরাতের। কিন্তু তেলআবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রথম কোনো উপসাগরীয় আরব দেশ হিসেবে চুক্তিতে পৌঁছাল আমিরাত। আর আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আমিরাত হলো তৃতীয়।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে তথাকথিত চুক্তি ঘোষণা করেন। ট্রাম্প জানান, চুক্তিতে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি আর দখল করবে না, এমন প্রতিশ্রুতি ইসরায়েল দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এমন চুক্তিতে বেজায় খুশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরে টেলিভিশনে ভাষণ দেন। এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি অতুলনীয় আনন্দের মুহূর্ত, ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপসাগরীয় আরব দেশটির সঙ্গে পরিপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক শান্তি প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেবে চুক্তিটি। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদাহরণ অঞ্চলের বাকি দেশগুলোও অনুসরণ করবে।

তবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি আর দখল করা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের যে পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে সাময়িকভাবে অপেক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চুক্তিতে তাঁর সেই অনুরোধ মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি তিনি এখনো বাতিল করেননি। তা এখনো বিবেচনায় রয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যতটা খুশি, ঠিক ততটাই ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আমিরাতের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি, যা বিরল ঘটনা। তিনি আমিরাত থেকে অবিলম্বে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।

আমিরাতের এমন পদক্ষেপে খুবই বিস্মিত হয়েছেন ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা। দখলকৃত পশ্চিম তীরে রামাল্লাহ থেকে প্রেসিডেন্ট আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব আমিরাতের এই পদক্ষেপকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে মনে করেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের পর সবচেয়ে কড়া মন্তব্য করেছে তুরস্ক ও ইরান। গতকাল শুক্রবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমিরাতের এই ‘ভণ্ডামি ব্যবহার’ ইতিহাস ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ কখনো ক্ষমা করবে না। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের চুক্তি বিপজ্জক ও অবৈধ। সৌদি আরব এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও আরব দেশ বাহারাইন, মিসর ও জর্ডানও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে জামার্নি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর