img

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) গ্রাহক এলাকায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েই বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল করার লিখিত নির্দেশ কারা দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি এ ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, এত বড় সিদ্ধান্ত ডিপিডিসি নিতে পারে না। এটি আইনবহির্ভূত কাজ। সরকার করোনাকালে (ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ) বিল নেওয়া বন্ধ রেখেছিল। পরে এই বিল যখন গ্রাহক দিয়েছে, তখন বিলম্ব মাশুল দিতে হয়নি।

প্রথম আলোতে ‘কর্তাদের হুকুমে ভুতুড়ে বিল, শাস্তি কর্মীদের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ভুল করে নয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েই বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল করেছিল ডিপিডিসি। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাড়তি রাজস্ব দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘পারফরম্যান্স বোনাস’ নেওয়া। একই সঙ্গে প্রথাগত লোকসান (সিস্টেম লস) কমিয়ে দেখানো ছিল এর উদ্দেশ্য।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগ থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলে ও নারায়ণগঞ্জে গ্রাহকদের কোথায় কতটুকু বেশি বিল করতে হবে, এমন একটি খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ খবরের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বেআইনি এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি করা হবে। যাঁরা দায়ী, তাঁরা শাস্তি পাবেন।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপিডিসি তাদের ৩৬টি কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে বেশি বিল করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই নির্দেশে এলাকাভেদে ১০ থেকে ৬১ শতাংশ বেশি বিল করতে বলা হয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বেশি বিল করার দায় এবং এই অপরাধের শাস্তি কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেন পাবেন?

তবে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান চাকমা বাড়তি বিল করার নির্দেশনা দেওয়ার কথা গতকালও অস্বীকার করেছেন। তাহলে ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগ থেকে কে চিঠি পাঠাল? বাড়তি বিল করার লিখিত নির্দেশনা কে দিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না।’

ডিপিডিসির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) এস এম শহীদুল ইসলামের নির্দেশে একই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রবিউল আলম সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ে (এনওসি) নির্বাহী প্রকৌশলীদের মেইলে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, কোন এলাকায় কত বাড়তি বিল করতে হবে, তার ছক ই-মেইলে পৃথক একটি ফাইলে দেওয়া হয়েছে। এই ই-মেইলের অনুলিপি (সিসি) পাঠানো হয় ডিপিডিসির এমডি, নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন-অর-রশিদ ও নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) এস এম শহীদুল ইসলামকে।

অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগে গত ৫ জুলাই ডিপিডিসির একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ১৪ জনকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ডিপিডিসি।

বিইআরসি এখনো ব্যবস্থা নেয়নি

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করে দেয়। এর বাইরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই বিতরণ কোম্পানিগুলোর। ডিপিডিসি চিঠি দিয়ে বাড়তি বিল করার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি বিইআরসির নজরেও এসেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিইআরসির দাবি, তারা এ বিষয়ে খোঁজখবর করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘আমাদের একজন কমিশন সদস্য এ বিষয়ে তথ্য–উপাত্ত জোগাড় করছেন। একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরি হওয়ার পর কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে সিদ্ধান্ত নেব।’

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর