img

এক মাস ধরেই বাজারে চালের দাম বাড়ছিল। বন্যা এসে সেই দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে মোটা চালের কেজি ৪৫ টাকা ছুঁয়েছে। অন্যদিকে করোনার জন্য দুই মাস ধরে ত্রাণ দেওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামের মজুত ক্রমেই কমে আসছে। বন্যা শুরু হওয়ায় সামনে তা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, চালকলমালিকেরাও এখন চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছেন না।

এই পরিস্থিতিতে আবারও চাল আমদানির দিকে ঝুঁকছে সরকার। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে চাল আমদানির এ সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।

এদিকে, চালকলমালিকেরা সরকারি গুদামে চুক্তি অনুযায়ী চাল না দিলেও চাল আমদানির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, শুল্ক কমিয়ে দিলে ২০১৭-১৮ সালের মতো নিয়ন্ত্রণহীন আমদানি হবে। প্রয়োজনের বেশি চাল আমদানি হয়ে ধান-চালের দাম কমে যাবে। কৃষক এবং চালকলমালিক উভয়ে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা সরকারিভাবে সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির পক্ষে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী বলেন, চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরেই নেওয়া উচিত ছিল। নানা দুর্যোগের কারণে বোঝা যাচ্ছিল এ বছর চালে ঘাটতি হবে। আর তাতে আমদানির দরকার হতে পারে। দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমদানি শুরু করলে মানুষের ভোগান্তি যেমন বাড়ে, তেমনি বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে গিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে আমদানি করতে চাইলে তা দ্রুত করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চালের দাম গত এক মাসে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসে মাঝারি মানের চালের দামও কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।

 

মজুত কমছে, মোটা চালের দাম ৪৫ টাকায় পৌঁছেছে, চালকলমালিকেরা এক মাস ধরে সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছেন না।

দেশের চালকলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘সরকার যে দামে আমাদের সঙ্গে চাল কেনার চুক্তি করেছিল, সেই দামে আমরা দিতে গেলে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। তবে সরকার চাল আমদানি করলে বাজারে দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু এখন কৃষক যে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন, সেটা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন। সীমিত পরিসরে সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মাধ্যমে চাল আমদানি করা উচিত বলে তিনি মত দেন।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী চালকলমালিকেরা সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছেন কি না, তা জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে চালের আমদানি শুল্ক ৬৫ শতাংশ।

খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এ ব্যাপারে বলেন, ‘চাল আমদানির জন্য শুল্ক কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনই আমরা তা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছি না। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেখে তারপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানির সুযোগ দেব।’

২০১৭ সালে হাওরে ফসল বিপর্যয়ের পর মোটা চালের দাম বেড়ে কেজিতে ৫০ টাকা হয়েছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তখন সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে শূন্যের কোটা নামিয়ে আনে। হাওরের বন্যায় সরকারি হিসাবে ৬ থেকে ১০ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হলেও বেসরকারি আমদানিকারকেরা ২০১৭-১৮ সময়ে প্রায় ৪০ লাখ টন চাল আমদানি করেন। এতে ধান ও চালের দাম অনেক কমে যায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই দাম সরকার নির্ধারিত সংগ্রহমূল্যের চেয়ে কম ছিল। এই পরিস্থিতিতে সরকার এ বছর কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে প্রায় ১৯ লাখ টন ধান চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়ে গেলে চালের দাম বেড়ে যায়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী এ ব্যাপারে আরও বলেন, চাল আমদানির সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে, তা খেয়াল রাখাটাও সরকারের দায়িত্ব। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল আমদানি যাতে না হয়, সে জন্য বাজারে সরকারের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে, তাদের এ বিষয়ে নিবিড় তদারকি দরকার।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর