img

ঋণের সুদ হার নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় ও করোনাভাইরাসের কারণে সব ব্যাংকের আয় কমে গেছে। চলতি বছর শেষে আয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে অনেক ব্যাংক। খরচ কমাতে তাই বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংক এরই মধ্যে কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলো বেতন না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি একাধিক ব্যাংক কার্যালয় ও শাখার ভাড়া বাবদ খরচ কমিয়ে আনছে। আবার কেউ কেউ পদোন্নতি, প্রণোদনা বোনাস ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করে খরচ কমানোর পথ বেছে নিয়েছে। কেউ গাড়ির খরচ, পরিসেবা বিল, প্রশিক্ষণ খরচ, বিভিন্ন ধরনের সভায় অংশগ্রহণের ভাতা কমিয়ে দিয়েছে। বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক এখনই বেতন কমিয়ে কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে না।

বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এরই মধ্যে পুরো একটি ভাড়া ভবন ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর গুলশান লিংক রোডের ‘এমটিবি স্কয়ার’ নামের এ ভবনের জন্য বছরে ৫ কোটি টাকা ভাড়া দিতে হতো ব্যাংকটিকে। এখন সেটি ছেড়ে কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে তারা।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ভবনটি ছেড়ে দিয়েছি। তার বদলে বিভিন্ন শাখায় যেসব ফাঁকা জায়গা আছে, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের ব্যাংকের যেসব এটিএমে কম টাকা উত্তোলিত হয়, তা স্থানান্তর করা হচ্ছে। অফিস পরিচালনার খরচও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব উদ্যোগের ফলে বেতন না কমিয়েও ব্যাংকের খরচ কমে আসবে।’

গত ১৪ জুন বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এক চিঠিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমাতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়। পাশাপাশি খরচ কমাতে পদোন্নতি, উৎসব ভাতা, প্রণোদনা ভাতা বন্ধ রাখাসহ আরও বেশ কিছু সুপারিশ করে বিএবি। বিএবির ওই সুপারিশের আগেই বেসরকারি খাতের এবি ও সিটি ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেয়। বিএবির চিঠির পর বেতন কমায় এক্সিম ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এ নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। এরপরই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ও করোনার ক্ষতি পোষাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকারদের উজ্জীবিত রাখতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কর্মীর বেতন না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংকও। ব্যাংকটির এমডি রাহেল আহমেদ বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের অনেক বিভাগের কর্মীরা বাসা থেকেই অফিস করছে। এর মধ্যে কিছু বিভাগের জন্য আলাদা জায়গা প্রয়োজন নেই। তাই কিছু ভাড়া জায়গা ছেড়ে দিয়ে ও অন্যান্য অফিস খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বেতন না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনসিসি ব্যাংকও। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নূরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, ‘যেখানে আমাদের কার্যালয় ও শাখা রয়েছে, সেখানকার ভাড়া কমাতে আমরা সংশ্লিষ্ট ভবনমালিককে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও কীভাবে খরচ কমানো যায়, তা নিয়ে পরবর্তী পর্ষদ সভায় আলোচনা হবে।’

নতুন ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকও ভাড়া কমাতে ভবনমালিকদের চিঠি দিয়েছে।

রাজধানীর গুলশান, বনানী ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় নতুন আধুনিক বিলাসবহুল ভবন মানেই কোনো না কোনো ব্যাংকের শাখা। অনেক ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে এসব ভবনে জায়গা কিনে বা ভাড়া নিয়ে কার্যালয় বা শাখা খোলার প্রবণতা চলে আসছে দুই দশক ধরে। এসব ভবনের অনেকগুলোই আবার কোনো না কোনো ব্যাংকের পরিচালকের। তাই পরিচালকদের বাড়তি সুবিধা দিতে ও তাঁদের চাপে এসব ভবনে বেশি দামে জায়গা কিনতে বা ভাড়া নিতে বাধ্য হয় ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক আবার তাদের প্রধান কার্যালয়ে ব্যায়ামাগার, বিনোদন কেন্দ্রসহ আরও নানা স্থাপনার মাধ্যমে খরচের খাত বাড়িয়েছে।

জানা গেছে, এসআলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্প্রতি বেতন–ভাতা না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কীভাবে কমানো যায়, তার একটা খসড়া তৈরি করেছেন। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, এনআরবি গ্লোবাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। তারা এখনই বেতন না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনতে চায়।

এ জন্য খরচ কমানোর খাত হিসেবে প্রণোদনা ভাতা, পদোন্নতি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নিয়োগ বন্ধের কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। এভাবে পরিচালন খরচ ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় তারা। এ ছাড়া করোনায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় অন্যান্য খাতে খরচ বন্ধ করতে চায় ব্যাংক ছয়টি। গাড়ি বাবদ খরচ, পরিসেবা বিল, নাশতা খরচ, অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের ভাতা বন্ধ রাখতে চায় ব্যাংকগুলো।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মাহবুব-উল-আলম বলেন, ‘করোনার কারণে বিভিন্ন সভা, আলোচনা এখন অনলাইনে হচ্ছে। এ ছাড়া নাশতা, স্টেশনারি, গাড়ির তেল, বিদেশ ভ্রমণ বাবদ খরচও কমে গেছে। এতে এমনিতেই খরচ অনেক কমে এসেছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ 

এই বিভাগের আরও খবর