img

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলসংযোগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা। ঈশ্বরদী থেকে নতুন রেল লাইন ও নতুন স্টেশন স্থাপন কাজ চলছে। আর রেলওয়ের যাত্রী সেবার মনোন্নয়নের জন্য ব্রিটিশ আমলের পর থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনকেও করা হচ্ছে আধুনিকায়ন। এই জংশন স্টেশনে এক সঙ্গে ১৮টি ট্রেন দাঁড়ানোর জন্য রেল লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মিটার গেজ ও ব্রডগেজ (ডুয়েল) লাইনের জন্য দুই পাশে সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজের ও ব্যবহৃত মালামালের মান এবং কাজের অগ্রগতি দেখতে আগামীকাল শনিবার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পরিদর্শনে আসছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা। রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রেলওয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, বৃটিশদের শাসনামলে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পড়েনি এ জংশন স্টেশনে। পুরাতন বিল্ডিং, ট্রেনের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফুট নিচু প্লাটফর্ম, ছাউনি ফুটো, যাত্রীদের বিশ্রামাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী টয়লেট, যাত্রীদের বসবার স্থান সংকট, লাইনগুলো অতি পুরাতন ও নড়বড়েসহ মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারী, প্রতারকসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আশ্রয় ছিল ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।

২০১৯ সালের ২২ জুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সেই সময় স্টেশনে উপস্থিত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ট্রেনযাত্রীগণ স্টেশনের সমস্যাগুলো মন্ত্রীর নিকট তুলে ধরেন। মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে স্টেশনটিতে যাত্রী-সেবার মান বাড়াতে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজারকে (জিএম) নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মতেই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (আরএনপিপি) রেললাইন নির্মাণ, নতুন স্টেশন স্থাপন, রেললাইন সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের পাশাপাশি ঈশ্বরদী প্লাটফর্মে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্লার্টফর্ম সংস্কার, একই সঙ্গে ১৮টি কোচ স্টেশনে দাঁড়ানোর উপযোগী করতে সম্প্রসারণ, ট্রেন থেকে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ্য রোগীদের খুব সহজেই নামার সুবিধার্থে প্লার্টফর্ম উচু করণ, যাত্রী সেবার মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক টয়লেট, বসার স্থান, বিশ্রামাগারসহ রেলওয়ের স্টেশনটিকে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটাল ইয়ার্ড, নতুন সিগন্যাল ভবণ নির্মাণ ও সিগান্যালকে ডিজিটালাইজডকরণসহ নানামুখি উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর এই কাজটি ক্যাসেল কন্সট্রাকশন লি. অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. জয়েন্ট ভেনচ্যার কম্পানির মাধ্যমে করা হচ্ছে।

সরেজমিনের ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রুপ ভিত্তিতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। একই সঙ্গে রেল লাইন সম্প্রসারণ, পুরাতন রেল লাইন সংস্কার, যাত্রীদের বসার স্থান নির্মাণ ও সংস্কার, শেড মেরামত, প্লাট ফর্মকে সকল বয়সী ও রোগীদের ট্রেনে ওঠা নামার জন্য উঁচু করার, আধুনিক সিগন্যাল ভবন, উন্নত মানের টয়লেট নির্মাণ কাজ চলছে। 

কাজ তদারকিকারী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য্য) আইডাব্লিও মো. আবু তৌহিদ সুমন কালের কণ্ঠকে জানান, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের উন্নয়ন কাজগুলো স্ট্যান্ডার্ড মানের করা হচ্ছে। কাজে ব্যবহৃত রড, বালু, পাথর, সিমেন্ট ল্যাব টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরো জানান, স্টেশনের সকল কাজ সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে তিনিসহ পিডাব্লিও (পদ) তদারকি করছেন। পাশপাশি পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) ও প্রকৌশলী-২ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা তদারকি করছেন।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আসাদুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, এ স্টেশনসহ সকল স্টেশনেই যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের জন্য নানামুখি উন্নয়নমূলক কাজে করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যেই স্টেশনটি আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী সুযোগ সুবিধাজনক করে তোলার কাজ চলছে।

তিনি আরো জানান, মান্ধাতা আমলের এনালগ প্রযুক্তি বাতিল করে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটালভাবে পুরো ইয়ার্ড ও স্টেশন এলাকাকে প্রযুক্তি নির্ভর করা হবে। পুরো ইয়ার্ডকে ডিজিটাল রূপান্তর করে একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হবে। খুবই শিগগিরই এসব কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে। কাজের মান ও অগ্রগতি দেখতে আগামীকাল শনিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহাদয় ঈশ্বরদীতে আসছেন বলেও জানান রেলওয়ের এই কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর