img

দেরিতে হলেও ঢাকার বাজারে শীতকালীন সবজির দাম বেশ কমেছে। টমেটো-বরবটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামই এখন ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। তবে ভোক্তাদের ভোগাচ্ছে চাল আর পেঁয়াজ। ধান কাটার মওসুম শুরু হলেও খুচরা বাজারে এখনো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের অবস্থাও তাই। বাজারে নতুন পেঁয়াজ এসেছে কিন্তু দাম বাড়তিই রয়ে গেছে। খুচরা বাজারে এখনো দেশী পেঁয়াজ ১২০-১৪০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৯০ টাকা কেজি দরে। চাল-পেঁয়াজের দাম সহনীয়পর্যায়ে আসতে আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, হাজীপাড়া, শান্তিনগর এবং সেগুনবাগিচা অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে গতকাল ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকটা সহনীয় দামে পছন্দের সবজি কিনতে পারছেন ভোক্তারা। অনেক সবজির কেজিই এখন ২০-৩০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। দীর্ঘ দিন ধরে ১০০ টাকার ওপরে কেজি দরে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন এক কেজি শিম ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মুলা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও এ সবজিটির দাম ৩০ টাকার ওপরে ছিল। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০ টাকা। তবে শীতের প্রধান সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপির দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে ফুলকপি ২০ টাকায় পাওয়া গেছে; তার দাম বেড়ে এখন হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। বাঁধাকপি আগের সপ্তাহের মতোই ২০-৩০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমার তালিকায় রয়েছে নতুন আলুও। প্রতি কেজি নতুন আলু ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকার ওপরে। নতুন আলুর দাম কমায় পুরনো আলুর দামও কমেছে। এখন ১০-১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পুরনো আলু। গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শালগমের দাম কমে ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে। বেগুনের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৫০ টাকা।

সবজির দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করে খিলগাঁও বাজারের ক্রেতা শফিকুল আলম বলেন, অনেক দিন পর বাজারে এসে পছন্দমতো সবজি কিনতে পারছি। আগে তো টমেটোতে হাতেই দেয়া যেত না। আজ শুক্রবার এক কেজি পাকা টমেটো কিনেছি ৫০ টাকা দিয়ে। গত সপ্তাহেও এক কেজি টমেটোর দাম ছিল ১২০ টাকা। শিম কিনেছি ২৫ টাকা কেজি দরে। দুই আঁটি লালশাক কিনেছি ১০ টাকা দিয়ে। 
তিনি বলেন, আমাদের মতো নি¤œআয়ের মানুষের পক্ষে তো আর ৭০-৮০ টাকা কেজি দরের সবজি কেনা সম্ভব না। আর মাছ মাংসও প্রতিদিন কেনা সম্ভব না। সবজির দাম এমন থাকলে খুব ভালো লাগে। পছন্দ মতো সবজি কিনতে পারা যায়।

এ দিকে গ্রাম-গঞ্জে শীত বাড়ার সাথে সাথে বাজারে এসেছে নতুন পেঁয়াজ। ফলে দাম এখন নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু দাম না কমে উল্টো বাড়ছে। পাইকারি বিক্রেতারা এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫৫০-৫৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের পাইকারি দাম পড়ছে ১১০-১১৬ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ এক পাল্লা ৩৫০-৩৭৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকা। একই বাজারের খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১২০-১২৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকা কেজি। তবে কাওরান বাজার সিটি করপোরেশন মার্কেটে নতুন পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি করতেও দেখা যায়। বাজারে নতুন পেঁয়াজ এলেও অধিকাংশ দোকানি তা ওঠাননি। কারণ হিসেবে তাদের বক্তব্য, নতুন পেঁয়াজের কাস্টমার কম। কিন্তু দাম বেশি। পাইকারি বাজার থেকে ৮০ টাকায় কিনে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ তারা ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান। নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে দাম সহনীয় হয়ে আসতে আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান বিক্রেতারা।

জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে গত নভেম্বরে দেশে চালের সামগ্রিক মজুদ ছিল ৭০ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবেÑ সরকারি গুদামে বর্তমানে মজুদ চার লাখ ৬০ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এবারের মওসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা দেড় কোটি টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ কাটা হয়েছে। অর্থাৎ আমন থেকে ইতোমধ্যে ৪৫ লাখ টন চাল কৃষকের গোলা ও ব্যবসায়ীদের গুদামে ঢুকেছে। এখান থেকে সরকার মাত্র তিন লাখ টন সংগ্রহ করতে পাঁচ হাজার চালকল মালিকের সাথে চুক্তি করেছে। অর্থাৎ আগের মজুদ, আমনের চাল ও আমদানি মিলিয়ে হিসাব করলে দেশে চালের কোনো সঙ্কট নেই। কিন্তু দাম বেড়েই চলেছে। ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চালের দাম এক সপ্তাহে তিন টাকা বেড়ে ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫৮-৬২ টাকা দরের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৮ টাকায়। আমন ধান কাটার মওসুম পুরোপুরি শুরু না হওয়া পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান বিক্রেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর