img

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন রাকিব (ছদ্মনাম)। প্রথম বর্ষেই কবি জসীমউদদীন হলের গণরুমে ওঠেন। বছর না পেরোতেই হল ছেড়ে দেন, ওঠেন আজিমপুরের একটি মেসে। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘হলে উঠেছিলাম ভালোমতো পড়াশোনা করতে, কিন্তু গণরুমে পড়া যায় না।হলের রিডিংরুমেও জায়গা পাওয়া যায় না। ’

আর্থিকভাবে সচ্ছল রাকিব মেসে উঠতে পারলেও অসচ্ছলদের মেসে থাকার সামর্থ্য নেই। হলের আবাসনসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও কোনো কোনো হলের তৃতীয়, চতুর্থ এমনকি মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদেরও গণরুমে থাকতে হচ্ছে। 

গণরুমের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। আর হলের পাঠকক্ষগুলোতে (রিডিংরুম) সিনিয়রদের কারণে জায়গা পাওয়া যায় না। আবার সকালে পাঠকক্ষগুলো কিছুটা খালি থাকে। তবে আগের রাতের গেস্টরুম প্রগ্রাম ইত্যাদির কারণে ঠিকমতো ঘুম হয় না। এতে সকালে পড়াশোনা করতে পারেন না তাঁরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতেও চেয়ার পাওয়া নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। 

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীমউদদীন হল, বিজয় একাত্তর হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জগন্নাথ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলের পাঠকক্ষগুলোতে দুই হাজার চার শর মতো পড়ার চেয়ার আছে। আর ১৩টি হলের গণরুম আছে শতাধিক। এসব গণরুমে থাকছেন চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। 

এ বিষয়ে কবি জসীমউদদীন হলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আল মুকিত বলেন, হলগুলোতে সংকীর্ণ জায়গায় অনেক ছাত্রের বসবাস। ফলে আবাসন সংকটের পাশাপাশি পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যায় না। হলের রিডিংরুমের সংখ্যাও কম। অনেক সময় সকালে পরীক্ষা থাকলেও অনেকে রিডিংরুমে পড়ার জন্য ন্যূনতম জায়গাও পান না। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। 

আবাসিক হলে পড়াশোনা করার জায়গা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তুলনামূলক খারাপ ফলাফল করছেন গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা। এর কারণ হিসেবে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, যেহেতু গণরুমে থাকতে হয়, প্রথম বর্ষে তাই পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায় না। এর প্রভাব পরীক্ষার ফলাফলে পড়ে। আবার যখন একটু সিনিয়র হয়ে যায়, তখন সিট পাওয়া গেলে নিজের রুমেও পড়াশোনা করা যায়, রিডিংরুমেও জায়গা পাওয়া যায়। তখন ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয়। 

সার্বিক বিষয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষরা পড়াশোনার জায়গা সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ শাহ মো. মাসুম বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা ও বাস্তবতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই হলে থাকতে চায়, কিন্তু সবার জন্য সিট নেই। তাদের বেরও করে দেওয়া যায় না। এ কারণে এসব সমস্যা দেখা যায়। এ সমস্যার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে চলতে হবে এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য নতুন হল বা হলগুলোতে আসনসংখ্যা বাড়াতে হবে। ’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘গণরুমে পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যায় না, এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য আমাদের এই গণরুম নামের অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আর আমাদের শিক্ষার্থী অনুসারে আবাসিক হলে সিট সংখ্যা অনেক কম। হল সংখ্যা বাড়িয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি পূর্ণ আবাসিক করা যায় তাহলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। ’

এই বিভাগের আরও খবর